আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজ সহ একগুচ্ছ কেন্দ্রীয় যোজনার টাকা পশ্চিবঙ্গকে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। গত দু বছরের বেশি সময় ধরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জানাচ্ছে রাজ্য সরকার। বকেয়া চেয়ে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ অর্থাত্ সোমবার দিল্লির রাজঘাটে ধর্না থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, 'কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ করছি। প্রস্তুত থাকুন। লড়াই আরও জোরদার হবে।' একই সঙ্গে অভিষেকের দাবি, যখন থেকে দেশের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তখন থেকেই বাংলা বঞ্চনার শিকার। প্রতিটি কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে বঞ্চনা করেছে।
বাংলার বকেয়া আদায়ের দাবিতে আজ ও আগামিকাল, অর্থাত্ ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লিতে ধর্না কর্মসূচি পালন করছে তৃণমূল কংগ্রেস। বহু তৃণমূলকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই ধর্নায়। এদিন রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ২ ঘণ্টা ধর্নায় বসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ গোটা তৃণমূল নেতৃত্ব। সঙ্গে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। রাজঘাটে ধর্না শেষে অভিষেকের কথায়, '২০২১ সাল থেকে বাংলার প্রতি যে ধারাবাহিক লাঞ্ছনা , তার বিরুদ্ধে একাধিকবার আমরা দিল্লিতে এসে শান্তিপূর্ণ ভাবে দাবি করেছি। মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে। ১০০ দিনের টাকা ও আবাস যোজনা মিলিয়ে ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাংলার পাওনা। জোর জবরদস্তি আটকে রেখেছে কেন্দ্র। তিনটি ছোট শিশু বিষ্ণুপুরে উঠোনের সামনে খেলা করছিল, দেওয়াল চাপা পড়ে প্রাণ হারাতে হল। আজ যদি এদের পাকা বাড়ি থাকত, এটা ঘটত না। এমনকী এদের নাম আবাস লিস্টে রেজিস্ট্রেশন ছিল। ২০২১ সাল থেকে বাড়ি, জল, ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ।'
#WATCH | Delhi | TMC leader Sudip Bandyopadhyay alleges, "Just now, they tried to attack Abhishek Banerjee...I was there...Shame to this Government, we are surprised."
— ANI (@ANI) October 2, 2023
TMC national general secretary and MP Abhishek Banerjee says, "These people are scared, that is why they are… pic.twitter.com/CrSjHlfjzk
এরপরেই তৃণমূলের ধর্না আন্দোলনে দিল্লি পুলিশ ও সিআরপিএফ-এর অত্যাচারের অভিযোগ তোলেন অভিষেক। তাঁর দাবি, 'আমরা মহাত্মাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের লড়াই শুরু করতে চেয়েছিলাম। আমরা ঠিক এখানে ১টায় ঢুকেছি। সবাই ১টায় পৌঁছৈছেন রাজঘাটে। ১টা ১০ মিনিট থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ ধর্না শুরু করেছি। প্রত্যেক ১০ মিনিট অন্তর দিল্লি পুলিশ, সিআরপিএফ-এর দল এসে অত্যাচার করা শুরু করে। আগামী দিনে এই লড়াই আরও তীব্রতর হবে। অনেক চেষ্টা করেছে কেন্দ্র, পারেনি। ২ ঘণ্টা শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করেছি। একটাও রাজনৈতিক স্লোগান ব্যবহার করা হয়নি। বাংলার টাকা ছাড়তে হবে, আমরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করেছি। ৩ জন সন্তানহারা পিতা, ৪৮ ঘণ্টাও কাটেনি, মোদী, গিরিরাজ সিংদের জেদে আজ এঁরা সন্তানহারা। রাস্তার টাকা আটকে রেখেছে। ২৪ মাসে ১০ পয়সা বাংলার টাকা ছাড়েনি।'
এরপরেই কেন্দ্রকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, 'আমরা দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে গান্ধী জয়ন্তীতে কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ করছি। প্রস্তুত থাকুন, লড়াই জোরদার হবে। এরা বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলার মানুষও ছাড়বে না। বাংলায় বিজেপি বারবার হারে বলে বাংলার টাকা বন্ধ করেছে? এত জ্বালা কীসের? করুন না সিবিআই একশো দিনের কাজে। আজও বিজেপি সাংবাদিক বৈঠকে বলেছে, ৪টি জেলায় সমস্যা। বাকি জেলাগুলো কেন বঞ্চিত? ১৯১১ সালে রাজধানী দিল্লিতে আনা হয়েছিল। তখন থেকে বাংলা বঞ্চিত। প্রতিটি কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে বঞ্চনা করেছে। বিজেপি সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১০০ দিনের জব কার্ড হোল্ডারদের ট্রেন বাতিল করা হল। কী ভেবেছিলেন, ট্রেন বাতিল করব, কেউ আসতে পারবে না। কিন্তু সবাই এসেছে। মেরুদণ্ড সোজা করে বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে দিল্লিতে এসেছে। এটাই বাংলা। তদন্ত হোক। প্রথম গ্রেফতার হওয়া উচিত গিরিরাজ সিংয়ের। মোদীজি নিজের দম্ভ দেখাতে গিয়ে বাংলার মানুষকে ভাতে মারছে। টাকা বিজেপি সরকার আটকে রেখেছে, এটা সাংবাদিক সম্মেলন করে স্বীকার করেছে। আমি এটাই চাইছিলাম। দেরি হলেও সত্যি কথা স্বীকার করল।'
এর মধ্যে সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন পুলিশ মাইকিং করে বলে,'এখান থেকে চলে যেতে হবে। রাজঘাটের গেট আর আটকে রাখা যাবে না। দীর্ঘক্ষণ সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। তাঁরা গান্ধীজিকে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারছেন না। আপনারা তো জনপ্রতিনিধি। এখানে এমনভাবে পথ আটকে সাংবাদিক বৈঠক বা কোনও কর্মসূচি নেওয়া যাবে না। এটা অনুচিত।'বিধায়ক ও মন্ত্রী সুজিত বসুর অভিযোগ, তাঁর পায়ে পুলিশ বুট দিয়ে চেপে দিয়েছে। তাঁর জুতো হারিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁকে খালি পায়ে রাজঘাট থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।