জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় তীব্র তুষারঝড় ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়ে প্রাণ হারালেন সেনাবাহিনীর দুই প্যারা-কমান্ডো। শহিদ দুই বীরযোদ্ধা, ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষ (মুর্শিদাবাদ) এবং ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ (বীরভূম)। দুজনেই ভারতীয় সেনার এলিট প্যারা ইউনিটের সদস্য ছিলেন।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় হারিয়ে গেলেন দুই সেনা
মঙ্গলবার আহলান গাদোল এলাকায় সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির খবর পেয়ে সেনাবাহিনী চিরুনি অভিযান শুরু করে। ওই সময় থেকেই নিখোঁজ হন দুই কমান্ডো। সেনা সূত্রে জানা যায়, অভিযানের মাঝেই হঠাৎ তীব্র তুষারঝড় ও শ্বেতঝড় শুরু হয়, যার মধ্যে আটকা পড়েন তারা। কয়েকদিনের তল্লাশির পর বৃহস্পতিবার এক সেনার মৃতদেহ এবং শুক্রবার আরেকজনের মৃতদেহ কোকেরনাগের কিস্তোয়ার রেঞ্জ থেকে উদ্ধার হয়। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, চরম ঠান্ডা ও হাইপোথার্মিয়ার কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
সেনাবাহিনীর শ্রদ্ধা ও বীরত্বের স্বীকৃতি
চিনার কর্পস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “চরম আবহাওয়ার মধ্যেও নিরলসভাবে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষ ও ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ। তাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ জাতির কাছে অনুকরণীয়। তাঁদের সাহস আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে।”
চিনার কর্পস আরও জানায়, নিখোঁজ কমান্ডোদের খোঁজে হেলিকপ্টার এবং বিশেষ অনুসন্ধান দল ব্যবহার করা হয়েছিল, কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া তাতে বাধা দেয়।
লেফটেন্যান্ট গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলি
জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা শহিদ দুই সেনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আমাদের সাহসী সৈন্যদের ত্যাগ জাতি কখনও ভুলবে না। তাঁদের পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাই এবং পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছি।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় X-এ লিখেছেন, “অনন্তনাগে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শহিদ হওয়া আমাদের দুই বীর প্যারা-কমান্ডো, মুর্শিদাবাদের পলাশ ঘোষ ও বীরভূমের সুজয় ঘোষের আত্মত্যাগে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁদের পরিবারকে সম্ভাব্য সব রকম সাহায্য করবে রাজ্য সরকার।”
জাতির শোক ও গর্ব
দায়িত্ব পালনের সময় শহিদ হওয়া এই দুই সেনা সদস্যের আত্মত্যাগে সমগ্র দেশ শোকস্তব্ধ। তাঁদের বীরত্ব, আনুগত্য ও দেশপ্রেম জাতির ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। সেনাবাহিনী এবং জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, শহিদদের পরিবারের পাশে থাকবে তারা সর্বতোভাবে।