
রন্ধন ঐতিহ্যের গৌরবকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে, ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে লখনউকে “Creative City of Gastronomy” বা সৃজনশীল গ্যাস্ট্রোনমির শহর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্ব শহর দিবস উপলক্ষে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনে এই ঘোষণা করা হয়।
এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লখনউয়ের শতাব্দী প্রাচীন আওয়াধি রন্ধনশৈলী, জীবন্ত খাদ্য সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী ঐতিহ্যকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। এটি উত্তরপ্রদেশকে বিশ্বমানের গ্যাস্ট্রোনমিক গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী জয়বীর সিং বলেন, 'এই স্বীকৃতি কেবল লখনউয়ের রন্ধন ঐতিহ্যের স্বীকৃতি নয়, বরং ভারতের উন্নয়নের গল্পে উত্তরপ্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকেও তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দূরদর্শী নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশ আজ গর্বের সঙ্গে বিশ্বের মানচিত্রে নিজের স্থান তৈরি করছে।'
মন্ত্রী আরও বলেন, 'রন্ধন পর্যটন উত্তরপ্রদেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে, এবং এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতে রাজ্যকে খাদ্য পর্যটনের বিশ্বনেতা হিসেবে গড়ে তুলবে।'
পর্যটন ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান সচিব অমৃত অভিজাত জানান, 'লখনউয়ের প্রতিটি খাবার, রাজকীয় রান্নাঘর থেকে রাস্তার দোকান পর্যন্ত, তার সংস্কৃতি ও ঐক্যের গল্প বলে। এই মর্যাদা শহরের গ্লোবাল পরিচিতি বাড়াবে, খাদ্য উদ্যোক্তাদের নতুন দিশা দেবে এবং টেকসই পর্যটনকে উৎসাহিত করবে।'
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে লখনউতে ৮২ লক্ষেরও বেশি পর্যটক এসেছিলেন, আর ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৭০ লক্ষ। যা প্রমাণ করে, খাদ্য ও সংস্কৃতি একত্রে পর্যটন বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।
এই স্বীকৃতির পেছনে দীর্ঘ প্রস্তুতি ও গবেষণা রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী স্থপতি আভা নারায়ণ লাম্বা-র নেতৃত্বে একদল গবেষক লখনউয়ের রাজকীয় রান্নাঘর থেকে শুরু করে সাধারণ বিক্রেতা পর্যন্ত সবার সাক্ষাৎকার নেন এবং রেসিপি ও মৌখিক ইতিহাস সংরক্ষণ করেন।
উত্তরপ্রদেশ পর্যটন বিভাগের বিশেষ সচিব ঈশা প্রিয়া জানান, '৩১ জানুয়ারি ২০২৫-এ লখনউয়ের মনোনয়নপত্র সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয় এবং ৩ মার্চ ভারতের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন হিসেবে ইউনেস্কোতে পাঠানো হয়। কয়েক মাসের মূল্যায়নের পর ৩১ অক্টোবর সমরকন্দে ঘোষণা হয় লখনউয়ের নাম।'
এই স্বীকৃতির ফলে লখনউ এখন বিশ্বজুড়ে ৭০টি সৃজনশীল গ্যাস্ট্রোনমির শহরের কাতারে, হায়দ্রাবাদ, আল-মদিনা (সৌদি আরব), কেলোনা (কানাডা), কোয়ানঝো (চিন) এবং জারাগোজা (স্পেন)-এর মতো শহরের পাশে নিজের নাম লিখিয়েছে।
লখনউয়ের বিখ্যাত খাবার, গালৌটি কাবাব, আওয়াধি বিরিয়ানি, টোকরি চাট, পুরি-কচোরি, মালাই গিলোরি, মতিচুর লাড্ডু, কেবল রেসিপি নয়, এগুলি শহরের সংস্কৃতি ও ঐক্যের প্রতীক। প্রতিটি স্বাদে ফুটে ওঠে গঙ্গা-যমুনা তেহজিবের মেলবন্ধন।