১৫-র গেরোয় আটকে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জট। মঙ্গলবার ফল ঘোষণা হতেই রহস্য ঘনিয়েছে এই ১৫ সংখ্যা নিয়ে। ৪৫২টি ভোট পেয়ে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন শাসক শিবিরের প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণণ। আবার ৩১৫ জন বিরোধী সাংসদ ভোট দিলেও তাদের প্রার্থী সুদর্শন রেড্ডি পেয়েছেন ১৫টি ভোট। অর্থাৎ ক্রসভোটিং হয়েছে, তেমন একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। এবার প্রশ্ন, এই ১৫ জন 'বিভীষণ' কারা?
শাসক শিবিরের হিসেব
NDA প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণণ কমপক্ষে ৪৩৭টি ভোট পাবেন বলে শাসক শিবির দাবি করেছিল। লোকসভায় NDA সাংসদের সংখ্যা ২৯৩। রাজ্যসভায় ১৩২। অর্থাৎ মোট ৪২৫। এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগমোহন রেড্ডির দল YSRCP-র ১১ জন সাংসদ, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির ১ জন। যাতে সংখ্যাটা পৌঁছত ৪৩৭-এ। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায় সিপি রাধাকৃষ্ণণ পেয়েছেন ৪৫২টি ভোট। অর্থাৎ অনুমেয় সংখ্যার চেয়ে ১৫ বেশি।
বিরোধী শিবিরের হিসেব
মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার পর কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ জানিয়েছিলেন, বিরোধী শিবিরের দুই কক্ষ মিলিয়ে ৩১৫ জন সাংসদই INDIA জোটের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডিকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, তিনি ১৫টি ভোট কম পেয়েছেন।
১৫ সংখ্যা নিয়ে জল্পনা
জয়রাম রমেশের দাবি করা সংখ্যার চেয়ে INDIA জোটের প্রার্থী ১৫টি ভোট কম পেলেন কীকরে? তবে কি ক্রসভটিং হল? কারা করলেন ক্রসভোটিং? শুরু হয়েছে জল্পনা।
তৃণমূলের এক প্রবীণ সাংসদ জানিয়েছেন, দলের সমস্ত সাংসদই বি সুদর্শন রেড্ডিকে ভোট দিয়েছেন। তবে জোটে ভাঙন ধরালো কোন দল? এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর কারও কাছেই নেই।
বাতিল ভোট
আবার INDIA জোটেরই কোনও দলের সাংসদ ক্রসভোটিং করেছেন, এমনটাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ এই নির্বাচনে বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যাও ১৫। সেক্ষেত্রে সবকটিই যদি INDIA জোটের সাংসদদের হয়ে থাকে তবে ক্রসভোটিংয়ের সম্ভাবনা প্রায় নেই। কংগ্রেসের দাবি, ১৫টি অতিরিক্ত ভোটের কোনওটিই INDIA জোটের কেউ দেননি।
এদিকে, কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে BJP-র IT সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেন, '৩১৫ জন বিরোধী সাংসদই ভোট দিয়েছেন। তবে আসল প্রশ্ন হল কাকে দিয়েছেন। প্রচুর হইচই এবং বড়াইয়ের পরেও ইন্ডি প্রার্থী মাত্র ৩০০ ভোট জোগাড় করতে পারলেন, যা তাদের দাবির চেয়েও কম।' পাল্টা জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, 'উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবির পুরোপুরি একজোট ছিল। ০২২ সালে জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রার্থী মার্গারেট আলভা প্রদত্ত ভোটের মাত্র ২৬ শতাংশ পেয়েছিলেন। সেখানে এ বার সুদর্শন প্রদত্ত ভোটের ৪০ শতাংশ পেয়েছেন। পাটিগণিতের হিসেবে BJP-র যে জয়, তা আসলে তাদের নৈতিক এবং রাজনৈতিক পরাজয়।'
তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা তৃণমূলের সাংসদরা বি সুদর্শন রেড্ডিকেই ভোট দিয়েছি। তৃণমূলের একটা ভোটও এদিকে-ওদিক হয়নি। একটা ভোটও নষ্ট হয়নি। আমি এবং সৌগতদা অসুস্থতা সত্ত্বেও ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে গিয়ে ভোট দিয়ে এসেছি।’
BJP-র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাতার্য বলেন, 'যে ১৫টি ভোট বাতিল হয়েছে, সেগুলির সব ক’টিই বিরোধীদেরই ভোট ছিল, এটা কখনও সম্ভব নয়। যদি বাতিল ভোটগুলির মধ্যে একটিও আমাদের হয়ে থাকে, তা হলেই তো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ক্রস ভোটিং হয়েছে।’