চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। মনের মধ্যে একরাশ আতঙ্ক জমা। ভয়ে কাঁপছেন। এই বুঝি নিজের বলে যে ঘরবাড়ি-সম্পত্তি, তা বোধহয় হাতছাড়া হল! কেরলের কোচিতে জেলেদের গ্রাম চেরাই। প্রকৃতির সৌজন্যে গ্রামের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই গ্রামেরই ৬১০টি পরিবার এখন ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছেন। কারণ, তাঁদের জমি ও সম্পত্তি দাবি করেছে ওয়াকফ বোর্ড।
আইনি জটের জেরে আরও বিপাকে পড়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। নিজেদের জমিতে ঋণ নিতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, ২০২২ সালের পর থেকে তাঁরা বিক্রিও করতে পারবেন না। আর এতেই মহা ফাঁপড়ে পড়েছেন গ্রামবাসীরা।
এই পরিস্থিতিতে সাইরো-মালাবার চার্চ এবং কেরালা ক্যাথলিক বিশপ কাউন্সিলের মতো বিশিষ্ট খ্রিস্টান সংগঠনগুলি ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল সম্পর্কিত যৌথ সংসদীয় কমিটিকে (জেপিসি) একটি চিঠি পাঠিয়েছে। তাদের একটাই দাবি, সংশোধন করা হোক ওয়াকফ আইন ১৯৯৫।
ওই গ্রামে গিয়েছিল আজতকের একটি দল। সেখানে কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। গৌরী নামে এক বৃদ্ধা জানান, 'এখনও এখানে লটারির টিকিট বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমরা এই বাড়ি ছেড়ে যেতে পারব না। এই আমাদের। ২০২২ সাল পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক ছিল, হঠাৎ আমাদের বলা হল যে,আমরা বছরের পর বছর ধরে যে জমিতে বাস করছিলাম সেটি আর আমাদের নেই।'
সিনা নামে আরও এক বাসিন্দা বললেন, 'আমার স্বামী একজন জেলে। বছরের পর বছর পরিশ্রম করে এই বাড়িটি তৈরি করেছেন তিনি। এই বাড়িটি ছাড়া আমরা আর কিছু তৈরি করিনি। আমাদের হাত থেকে এই বাড়ি হারিয়ে গেলে কিছুই থাকবে না। সরকারের উচিত ওয়াকফ বোর্ড আইন সংশোধন করে আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করা।'
প্রদীপ এবং তাঁর স্ত্রী শ্রীদেবী নামে এক দম্পতিও মুখ খুললেন। জমির নথিপত্র দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে প্রদীপ বলেন, 'আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। আমার ছেলে পরিবারের দেখাশোনা করে। অধিকার আদায়ের জন্য সব চেষ্টা করব। অনেক পরিশ্রম করে এই বাড়িটি তৈরি করেছি।'
গ্রামবাসীদের মতে, এই জমিটি সিদ্দিকী সাইত ১৯০২ সালে কেনেন। পরে সেটি ফারুক কলেজকে দান করেন। জমি নিয়ে জেলে এবং কলেজের দীর্ঘ বিবাদের নিষ্পত্তি হয় ১৯৭৫ সালে হাইকোর্টের রায়ে। ১৯৮৯ সাল থেকে স্থানীয়রা কলেজের থেকে জমি কেনা শুরু করেন। ২০২২ সালে হঠাৎই দাবি করা হয় যে, গ্রামটি ওয়াকফ বোর্ডের জমিতে অবস্থিত।