১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দীর্ঘ বিতর্কের পর শুক্রবার রাজ্যসভায় পাস হল ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫। মোট ১২৮ জন সাংসদ বিলের পক্ষে ভোট দেন, আর বিপক্ষে পড়ে ৯৫টি ভোট।
এরপর বিল অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়ার পর এটি আইনে পরিণত হবে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার লোকসভায় ১২ ঘণ্টারও বেশি বিতর্কের পর বিলটি পাস হয়েছিল। সেখানে ২৮৮ জন সাংসদ বিলের পক্ষে এবং ২৩২ জন এর বিপক্ষে ভোট দেন।
রাজ্যসভায় তীব্র বিতর্ক
রাজ্যসভায় এনডিএ ও ইন্ডিয়া ব্লকের নেতাদের মধ্যে বেশ তপ্ত বিতর্ক হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, বিভিন্ন পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতেই একাধিক সংশোধন করে বিলটি পেশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'ওয়াকফ বোর্ড একটি সাংবিধানিক সংস্থা। সমস্ত সরকারি সংস্থা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া উচিত।' বোর্ডে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২২ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪ জন অমুসলিম থাকবেন।
তাঁর পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দল মুসলিমদের ওয়াকফ বিল নিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, বিজেপি নয়। তিনি বলেন, 'আপনারা (বিরোধী দল) মুসলিমদের মূল স্রোত থেকে সরিয়ে রাখছেন।'
কিরেন রিজিজু আরও বলেন, '৬০ বছর ধরে কংগ্রেস ও অন্যান্য দল দেশ শাসন করলেও মুসলিমদের উন্নতির জন্য বিশেষ কিছু করেনি। ফলে আজও মুসলিমরা দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে।' তিনি বলেন, 'মুসলিমরা গরিব, এর জন্য দায়ী কে? কংগ্রেস। মোদী সরকার এখন তাঁদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে।'
বিলের মূল বিষয়বস্তু
ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালকে শক্তিশালী করা হবে। সুশৃঙ্খল নির্বাচন প্রক্রিয়া বজায় রেখে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সদস্যদের মনোনয়ন করা হবে।
ওয়াকফ বোর্ডের জন্য ওয়াকফ সংস্থাগুলির মিনিমাম কনট্রিবিউশন ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বছরে ১ লক্ষ টাকার বেশি আয় করা ওয়াকফ সংস্থাগুলিকে সরকারি অডিটের আওতায় আনা হবে।
সেন্ট্রাল পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির অটো-ম্যানেজ করা হবে।
যাঁরা কমপক্ষে ৫ বছর ধরে মুসলিম ধর্ম পালন করছেন, তাঁরা ওয়াকফে তাঁদের সম্পত্তি দান করতে পারবেন, ২০১৩ সালের আগের নিয়ম পুনরায় কার্যকর হবে।
ওয়াকফ ঘোষণার আগে উত্তরাধিকার সূত্রে মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত এবং এতিমদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
যে সরকারি সম্পত্তিগুলিকে ওয়াকফ হিসেবে দাবি করা হয়েছে, তার যাচাই-ভেরিফিকেশনের জন্য কালেক্টর পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
কেন্দ্র ও রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদেরও রাখা হবে, যাতে বোর্ডে আরও সর্বধর্মের পরিবেশ তৈরি হয়।
বিলটি এখন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে জন্য পাঠানো হবে। তিনি সম্মতি দিলেই এটি আইনে পরিণত হবে।