wayanad landslideWayanad Landslide: কেরলের ওয়েনাডে প্রকৃতির ধ্বংসযজ্ঞ। বৃষ্টির পর ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখনও পর্যন্ত, ১৪৩ জনের(প্রতিবেদন লেখার সময়) মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ৯০ জনেরও বেশি নিখোঁজ। এনডিআরএফ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রচুর মানুষকে উদ্ধার করেছেন। ১২৮ জন জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ওয়ানাডে আবহাওয়া এখনও বেশ খারাপ। ভারী বৃষ্টির কারণে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। আর এই আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকারী দলকে বেশ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর কেরল সরকার দু'দিনের শোক দিবসের ঘোষণা করেছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া প্রিয়জনকে খুঁজছে তাঁদের পরিবার। ড্রোন ও ডগ স্কোয়াডেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, যে জায়গায় (মুন্দাক্কাই) এই ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে সেটি একটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মধ্যে পড়ে এবং সেখানে কোনও মানুষ বাস করে না।
কিন্তু সেখান থেকেই মাটি, পাথর ও শিলা গড়িয়ে চুরামালায় নেমে এসেছে। ভূমিধসের উৎপত্তিস্থল থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে। যে জায়গায় মাটি-পাথর-জল নেমে এসেছে, সেটি একেবারেই বিপজ্জনক স্থান বলে চিহ্নিত ছিল না। বহু মানুষ এখানে বহু বছর ধরে বসবাস করছেন। ফলে অতর্কিতে এমন ঘটনা ঘটায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে।

ওয়ানাডে এমন বিপর্যয় হয়তো আগে কেউ দেখেনি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে উদ্ধারকারী দলও বেশ সমস্যায় পড়ছে।
২০০-রও বেশি জওয়ান উদ্ধার কাজে নেমেছেন
ওয়েনাডের মালপ্পুরমের পোথুকাল্লু এলাকা থেকে ১০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই জায়গাটা যেখানে ভূমিধস হয়েছিল সেখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। চালিয়ার নদীতে ভেসে গিয়েছিল দেহ। উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও আরও মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে।
সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ, ফায়ার ডিপার্টমেন্ট, এসডিআরএফ, এনডিআরএফের প্রায় ২৫০ জন কর্মী ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে নেমেছেন। সেনাবাহিনীর প্রায় ২২৫ জন জওয়ান উদ্ধার অভিযানে নেমেছেন। ভারতীয় বিমান বাহিনী কোয়েম্বাটুরের সুলুর এয়ারবেস থেকে ২টি হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে। এই কপ্টার দু'টি লাগাতার ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে উদ্ধার করছে।

ওয়েনাডের চুরামালা এলাকায় সময়মতো ত্রাণ কাজ শুরু হলেও উদ্ধারকারী দল মুন্ডকাই এলাকায় পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। চুরামালা যাওয়ার বেশিরভাগ রাস্তাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
ভূমিধসে ৪টি গ্রাম মুছে গিয়েছে
ভূমিধস ও বন্যায় চারটি গ্রাম ভেসে গিয়েছে। ওয়েনাড জেলার মেপাদ্দি, মুন্ডক্কাই, চুরামালা, আট্টমালা, নুলপুজা এলাকায় ভূমিধসের কারণে বহু জনবসতিপূর্ণ স্থান ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। কাদা-মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। চুরামালা এলাকায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় ঘটেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন
মঙ্গলবার, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সাধারণ মানুষকে একত্রিত হওয়ার জন্য আবেদন করেন। এর আগে ২০১৮ সালে বন্যায় রাজ্যের পরিস্থিতির কথাও মনে করান তিনি। তিনি বলেন, অনেকেই সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং জীবন-জীবিকা পুনঃস্থাপনের জন্য আরও সাহায্যের প্রয়োজন। তিনি প্রত্যেককে মুখ্যমন্ত্রীর দুর্যোগ ত্রাণ তহবিলে অনুদান দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেৃন।

জেলায় ৪৫টি ক্যাম্প
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা উদ্ধার অভিযানের ব্যবস্থা করেছি। রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রী অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করতে ওয়েনাডে গিয়েছেন।'

তামিলনাড়ু ৫ কোটি টাকা সাহায্য করেছে
মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বলেন, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন কেরলকে ৫ কোটি টাকা সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন। যেখানে কোচিন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড (সিআইএএল) ২ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, যে রাজ্য ওয়েনাড ভূমিধসে জীবন ও সম্পত্তির মর্মান্তিক ক্ষতির জন্য দু'দিনের সরকারি শোক দিবস পালন করবে। এই সময় সরকারি কোনও অনুষ্ঠান ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে না এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
কেন্দ্রীয় সরকার মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা সাহায্যের ঘোষণা করেছে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।