scorecardresearch
 

One Nation One Election: 'এক দেশ এক ভোট' কী? জানুন সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমানে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোট ও লোকসভা ভোট আলাদা আলাদা সময়ে হয়। এক দেশ এক ভোট-এর বিধি চালু হলে লোকসভা ও বিধানসভার ভোটগ্রহণ একসঙ্গেই হবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ একটা সময়েই কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল বেছে নিতে পারবেন। 

Advertisement
এক দেশ এক ভোট হলে কী কী সুবিধা ও অসুবিধা? এক দেশ এক ভোট হলে কী কী সুবিধা ও অসুবিধা?

লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার 'এক দেশ এক ভোট' নিয়ে মাঠে নামল মোদী সরকার। সেপ্টেম্বরে সংসদের পাঁচদিনের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই বৈঠক। এই অধিবেশনেই আসতে পারে ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিল। এজন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে বলেও খবর। 

'এক দেশ এক ভোট' বিষয়টা কী? 

বর্তমানে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোট ও লোকসভা ভোট আলাদা আলাদা সময়ে হয়। 'এক দেশ এক ভোট'-এর বিধি চালু হলে লোকসভা ও বিধানসভার ভোটগ্রহণ একসঙ্গেই হবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ একটা সময়েই কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল বেছে নিতে পারবেন। 

'এক দেশ ভোট'-এর সুবিধা কী কী? 

'এক দেশ এক ভোট' বিধি চালু হলে আলাদা আলাদ নির্বাচনের জন্য যে খরচ হয় তা বেঁচে যাবে। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে। এর মধ্যে রয়েছে ভোট আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের খরচ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার সংক্রান্ত ব্যয়। 

আরও একটা সুবিধা হল, সরকারি আধিকারিকদের কর্মক্ষমতা বেড়ে যাবে। বিভিন্ন সময়ে ভোটের কারণে তাঁরা ব্যস্ত থাকেন। তাতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়। তার উপরে আদর্শ আচরণ বিধির জন্য থমকে থাকে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পও। এছাড়া আইন কমিশনের মতে, একেবারে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন হলে ভোটের হারও বেড়ে যাবে। কারণ একবারই ভোট দিতে হবে। 

'এক দেশ এক ভোট'-এর অসুবিধা? 

একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার ভোট করাতে গেলে দরকার পড়বে সংবিধান সংশোধনের। জনপ্রতিনিধি আইন এবং অন্যান্য সংসদীয় বিধিরও বদল দরকার পড়বে। 

Advertisement

আঞ্চলিক বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, 'এক দেশ এক ভোট' হলে তাদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে। তাদের আশঙ্কা অমূলক নয়! কারণ লোকসভার সঙ্গে বিধানসভার ভোট হলে গুরুত্ব হারাবে স্থানীয় ইস্যুগুলি, অগ্রাধিকার পাবে জাতীয়স্তরের বিষয়গুলি। তাছাড়া ভোটের প্রচার ও আনুষঙ্গিক খরচেও তারা জাতীয়স্তরের দলগুলির সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না। 

এছাড়া একটি সমীক্ষা বলছে, ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে লোকসভা ও বিধানসভায় একই রাজনৈতিক দল বা জোটকে ভোট দেন ভোটাররা। ৬ মাসের ব্যবধানে নির্বাচন হলে সেটাই নেমে আসে ৬১ শতাংশে। 

কারা সমর্থন করছে? 

১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা ও বিধানসভার ভোটগ্রহণ একসঙ্গে হত। তবে ১৯৬৮ সাল থেকে তাতে বদল আসে। কারণ সময়ের আগেই ভেঙে যায় বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ও লোকসভা। ১৯৮৩ সালে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করানোর প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তৎকালীন সরকার তা খারিজ করে দেয়। তার পর ১৯৯৯ সালে একই সময়ে নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করা হয় আইন কমিশনের রিপোর্টেও। ২০১৪ সালে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে একসঙ্গে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। ২০১৮ সালে আইন কমিশন জানায়, অন্তত ৫টি সংবিধান সংশোধন করেই 'এক দেশ এক ভোট'-এর বিধি চালু করা সম্ভব। 

২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে 'এক দেশ এক ভোট' চালু করা নিয়ে তৎপর হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির বৈঠকও ডাকেন। ওই বৈঠকে গরহাজির ছিল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি, সমাজবাদী পার্টি এবং ডিএমকে। সেখানে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল আম আদমি পার্টি, তেলেগু দেশম পার্টি এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতি। 

২০২২ সালে দেশের  মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্রা জানান, একসঙ্গে নির্বাচন করাতে কোনও সমস্যা নেই কমিশনের। তবে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, একসঙ্গে নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধনের দরকার। এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে সংসদ। 

একসঙ্গে নির্বাচন করানোর জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তামাম রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, শিক্ষাবিদ, আমলা ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ চায় আইন কমিশন।  

কারা বিরোধিতা করছে? 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 'এক দেশ এক ভোট'-এর কথা বলার পর থেকে বিরোধিতা করে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাদের দাবি, এটা অসাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। চলতি বছর জানুয়ারিতে আপ অভিযোগ করে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে বিজেপি। আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং বলেন,'তিনটি রাজ্যে হারের পর এই ফিকির করছে বিজেপি।' কারও মতামত না নিয়ে এই বিধি লাগু করার চেষ্টা হলে প্রতিবাদ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। এছাড়া ইন্ডিয়া জোটের জেডিইউ, সমাজবাদী পার্টি ও আরএলডি-ও বিরোধিতা করেছে। 

এই প্রতিবেদনটি ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন

Advertisement