মহারাষ্ট্রে আজ নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হবে। মুম্বইয়ে বিজেপির বিধায়ক দলের বৈঠক হতে চলেছে খানিক পরেই। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলবেন, তারপরে নতুন নেতা বেছে নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি দফতরের বণ্টনও চূড়ান্ত করা হবে। মহাজোটে অন্তর্ভুক্ত বিজেপি, শিবসেনা ও এনসিপি কারা কটা দফতর পাচ্ছে সেটা জানা যাবে। দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে ৫ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। শপথ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী ও দুই উপ-মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিন দলের মধ্যে মন্ত্রিসভা ও দফতর বণ্টন চূড়ান্ত করা হবে।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ শীর্ষ নেতারা। মনে করা হচ্ছে বিজেপি কোটা থেকে মুখ্যমন্ত্রী হবেন এবং শিবসেনা-এনসিপি কোটা থেকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক বর্তমান একনাথ শিন্ডের মন্ত্রিসভায় কোন দলের কতজন মন্ত্রী স্থান পেয়েছেন এবং কোন দলকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। এখন কোন জোট কতগুলো করে মন্ত্রিত্ব দাবি করছে?
২৩ নভেম্বর মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছিল। ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব ১১ দিন ধরে চলছে, এখন মহারাষ্ট্রে নতুন সরকারে ভাগের লড়াই দেখা যাচ্ছে। বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদ চেয়েছে এবং অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী এটিকে সমর্থন করেছে। এরপর মুখ্যমন্ত্রী পদে শিবসেনার দাবি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায়, এখন সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হচ্ছে দফতরের ভাগের ওপর এবং গত ১১ দিন ধরে এ নিয়ে টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। মহাযুতির নেতারা যে দিল্লিতে বিজেপি হাইকমান্ডের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন, তা থেকেই অনুমান করা যায়। দেবেন্দ্র ফড়নবিস, একনাথ শিন্ডে, অজিত পাওয়ার দিল্লিতে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। অজিত পাওয়ার গত ২৪ ঘণ্টা ধরে দিল্লিতে ক্যাম্পিং করছেন। মনে করা হচ্ছে যে অজিত পাওয়ার আবারও বড় পোর্টফোলিওতে নজর রাখছেন। তিনি যখন ২০২৩ সালে মহাযুতি সরকারে যোগ দেন তখন তিনি তার দলের ৯ জন বিধায়ককে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন এবং বিজেপি এবং শিবসেনার কাছ থেকে কৃষি, অর্থ সহ অনেক বিভাগ কেড়ে নিয়েছিলেন। অজিত আবারও বড় দফতরগুলি নিজের কাছে রাখতে চান এবং এর জন্য তিনি পূর্ণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
শিন্ডে গোষ্ঠী আপোষ করার মেজাজে নেই
একই সময়ে, একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠীর বিধায়করাও আপোষ করার মেজাজে নেই৷ তারা দাবি করে যে তাদের নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিকল্পনার কারণেই এই নির্বাচনে বড় জয় পেয়ে জোট। একনাথ শিন্ডে নিজেই ছিলেন সবচেয়ে বড় মুখ। নানা গেম চেঞ্জার স্কিম এনে মহারাষ্ট্রের পরিবেশ পাল্টে দিয়েছিলেন এবং অর্ধেক জনসংখ্যাকে মহাযুতি শিবিরে নিয়ে এসেছিলেন। শিবসেনার গোষ্ঠী যুক্তি দিচ্ছে যে শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী না করে ডেপুটি সিএম পদ দেওয়া হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতো বড় দফতরও দেওয়া উচিত। এর জন্য ফড়নবিসের উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে। শিন্ডে যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন স্বরাষ্ট্র দফতর ফড়নবিসের কাছে ছিল।
বড় ভাইয়ের ভূমিকায় বিজেপি
এবার বিজেপি খুব একটা আপোষ করার মুডে নেই। ২০১৯ বৃহত্তম দল হওয়া সত্ত্বেও বিজেপিকে ছোট ভাইয়ের ভূমিকা পালন করতে হয়েছিল। কিন্তু এবার বিজেপির জয়ের স্ট্রাইক রেট হয়েছে ৮৯ শতাংশ। শক্তিশালী ম্যান্ডেটও বিজেপির দাবিকে শক্তিশালী করছে।
বিজেপির নতুন পরিকল্পনা কী?
২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত বিজেপি কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না। দলের কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছে তারা। এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মন্ত্রিত্ব ভাগ পর্যন্ত বড় ভাইয়ের ভূমিকায় থাকতে চায় বিজেপি। বিজেপির আশা ও পরিকল্পনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে। মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য কী ত্যাগ স্বীকার করতে হবে? বিজেপিও চায় না মহাযুতিতে কোনও ধরনের ফাটল ধরুক। তারা বার্তা দিতে চায যে মুখ্যমন্ত্রী থেকে মন্ত্রিত্ব বিভাজন পারস্পরিক সম্মতিতে হয়েছে। তাই দিল্লি থেকে মুম্বই পর্যন্ত মিটিং হচ্ছে এবং তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে না। একনাথ শিন্ডে এবং অজিত পাওয়ার ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁরা বিজেপি হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। তবে দিল্লি থেকে ফেরার পর মুম্বইয়ে মহাযুতির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও একনাথ শিন্ডের কর্মসূচিতে হঠাত্ পরিবর্তনের ফলে জোটে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কোন দল কোন দফতর দাবি করছে?
মন্ত্রিত্ব ভাগ নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। নতুন ক্ষমতা ভাগাভাগির সূত্রে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। বিজেপি ২১ থেকে ২২টি মন্ত্রিত্ব দাবি করেছে। স্বরাষ্ট্র দফতরকেও নিজেদের কাছে রাখতে চায় বিজেপি। যেখানে শিবসেনা ১১-১২টি দফতর নিয়ে সরকারে দুই নম্বরে থাকতে চায়। যদিও সরকারে ১০ জন মন্ত্রী সহ অজিত পাওয়ারের এনসিপিতে ঐকমত্য রয়েছে। তবে মন্ত্রিসভায় ১৬টি দফতর দাবি করেছেন একনাথ শিন্ডে। একই সঙ্গে অজিত পাওয়ার দাবি করেছেন, অর্থ দফতর তাঁর কাছেই রাখা হোক। এনসিপি অর্থ দফতর পেতে পারে বলেই সূত্র বলছে। আর বিজেপি মহারাষ্ট্রে স্বরাষ্ট্র এবং রাজস্বের মতো দফতর ধরে রাখতে পারে। সেই সঙ্গে স্পিকার ও বিধান পরিষদের চেয়ারম্যান পদও যেতে পারে দলের খাতায়। এছাড়াও শিন্ডের শিবসেনা নগর উন্নয়ন দফতরও পেতে পারে। বাকি দফতরগুলো নিয়ে পরে আলোচনা হবে।