আর চার-পাঁচ জন কলেজ পড়ুয়ার মতোই ছিলেন। ক্যাম্পাস রাজনীতিতে হাত পাকাচ্ছিলেন। সেই পড়ুয়াই কি না হয়ে উঠলেন দেশের গ্যাংস্টার। এই মুহূর্তে দেশের ডন নম্বর ১ তকমা তাঁকেই দেওয়া হচ্ছে। তিনি লরেন্স বিষ্ণোই। বর্তমানে তাঁর ঠিকানা জেল। তবে জেলে বসেও একের পর খুন, হুমকির মতো অপরাধের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন এই গ্যাংস্টার। প্রকাশ্যেই বলেছেন, বলিউডের সুপারস্টার সলমন খানকে খুন করতে চান। সম্প্রতি, সলমন-ঘনিষ্ঠ এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকিকে হত্যার নেপথ্যেও হাত রয়েছে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের। ওই হত্যাকাণ্ডের পর আরও একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন বিষ্ণোই।
পঞ্জাবের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি থেকে মুম্বইয়ের অলিগলি, সর্বত্রই রাজ করছে বিষ্ণোই গ্যাং। যে গ্যাংকে কব্জা করতে কোমর বেঁধে উঠে পড়ে লেগেছে পুলিশ-প্রশাসন।
বর্তমানে গুজরাটের সবরমতী জেলে বন্দি রয়েছেন বিষ্ণোই। জেলে থাকা সত্ত্বেও কীভাবে খুন-হুমকির মতো অপরাধের কারবার করছেন ওই গ্যাংস্টার, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। সম্প্রতি মুম্বইয়ে খুন হন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকি। তাঁকে খুনের দায় স্বীকার করেছে বিষ্ণোই গ্যাং। শুভম লঙ্কার নামে এক যুবক বিষ্ণোই দলের হয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
কলেজ পড়ুয়া থেকে কীভাবে ডন হলেন বিষ্ণোই?
কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতির হাত ধরেই ধীরে ধীরে উত্থান ঘটে লরেন্সের। তবে বছরের পর বছর ধরে নিজের গ্যাংকে গড়েছেন তিনি। নির্মম হত্যা, তোলাবাজি, অস্ত্র পাচারের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে ক্রমেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর। ২০২২ সালে পঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালার হত্যাকাণ্ডের হাত ধরে প্রথমবার খবরের শিরোনামে আসেন লরেন্স। সেই থেকেই দেশের ডন বিষ্ণোই।
কারাবন্দি অবস্থাতেও নিজের রাজত্ব বাড়িয়েছেন লরেন্স। জানা গিয়েছে, ২০১৮ এবং ২০২২ সালের মধ্যে ২৫টি অস্ত্র কিনেছিলেন তিনি। যার মধ্যে ছিল ৯এমএম পিস্তল এবং একে-৪৭। মুসেওয়ালাকে হত্যার পাশাপাশি দেশে অন্যান্য অপরাধের ঘটনাতেও ব্যবহার করা হয়েছিল ওই অস্ত্রগুলি।
বলিউডেও প্রতাপ বিষ্ণোইয়ের
মুসেওয়ালার খুনের পর বিষ্ণোইয়ের শ্যুটার সৌরভ ওরফে মহাকাল পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে, বলিউডে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান বিষ্ণোই। তাঁর দলবলের হুমকির মুখে পড়েছিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হানি সিং।
বিষ্ণোইয়ের হিটলিস্টে সলমন
১৯৯৮ সালে রাজস্থানে 'হাম সাথ সাথ হ্যায়' ছবির শুটিংয়ের সময় ২টি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেন বলে অভিযোগ ওঠে সলমন খানের বিরুদ্ধে। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে কৃষ্ণসার হরিণ অত্যন্ত পবিত্র। ফলে ওই ঘটনায় সলমনের উপর রেগে যান লরেন্স বিষ্ণোই। পরে অবশ্য ওই মামলায় জামিন পান সুপারস্টার। ঘটনার সময় লরেন্সের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। সেই সময় থেকেই সলমনকে টার্গেট করেছেন বিষ্ণোই।
গত কয়েক বছরে বিষ্ণোই দলের কাছ থেকে একাধিক বার হুমকি পেয়েছেন সলমন। বাবা সিদ্দিকির হত্যার দায় স্বীকার করেছে বিষ্ণোই গ্যাং। তার পর থেকেই সলমনের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে পানভেল ফার্মহাউসের কাছে সলমনকে হত্যার ছক বানচাল করেছিল মুম্বই পুলিশ। সেই সময় সলমনকে খুনের ছক কষেছিল লরেন্সের দলবল। তার আগে বান্দ্রায় সলমনের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইকে গুলি চালায় দুই দুষ্কৃতী। সলমনের বাবা সেলিম খানকেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বাবা সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ডের পর সলমনের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।