
সাবলীল বাংলা বলতে পারতেন। তাঁকে অনেকে মজা করে বলতেন, নামে সীতা ও রাম দুই-ই রয়েছে। অথচ আপামর কমিউনিস্ট। লোকসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। পাত্তা দেননি। বলেছিলেন, 'অনেকে আপনারা বলেছিলেন, কেন আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলাম। বিষয়টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা নয়। গোটা দেশ জানে, তৃণমূল আগে বিজেপির শরিক ছিল। আবার দরকারে তারা বোঝাপড়া করতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক যে ধারণা থেকে ‘ইন্ডিয়া’ তৈরি হয়েছে তাতে যারা আসতে চায়, তাদের সবাইকেই নিতে হবে।'এমনই ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল সদা বন্ধুত্বপূর্ণ। আসলে সিপিআইএম-এর জাতীয় স্তরে বাংলার প্রভাব বরাবরই বেশি। টানা ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গে শাসন করেছে বামেরা। দীর্ঘ দিন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থাকার পর আজ অর্থাত্ ১২ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদ সীতারাম ইয়েচুরি। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
জীবনে কখনও দ্বিতীয় হননি
১৯৫২ সালের ১২ অগাস্ট জন্মেছিলেন সীতারাম। হায়দরাবাদে স্কুলে পড়াশোনা। ১৯৬৯ সালে তেলঙ্গানা আন্দোলন শুরুর উত্তাল পরিস্থিতিতে সীতারামকে নিয়ে তাঁর পরিবার চলে যান দিল্লিতে। বাকি পড়াশোনা ও কর্মজীবন রাজধানীতেই শুরু য়। ১৯৭০ সালে দিল্লিতে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেন। ছোট থেকেই পড়াশোনা তুখোড় ছিলেন। হায়ার সেকেন্ডারিতেও প্রথম স্থান অধিকার করেন। স্কুল পাশ করে অর্থনীতি নিয়ে তিনি ভর্তি হন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট স্টিফেন কলেজে। ১৯৭৩ সালে অর্থনীতি নিয়ে পাস করলেন যখন সেখানেই ফার্স্ট ক্লাস।
জেএনইউ-এর তুখোড় ছাত্রনেতা
ছাত্র জীবনেই বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতি করলেও পড়াশোনায় কখনও ফাঁকি দেননি তিনি। ১৯৭৫ সালে অর্থনীতি নিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়(JNU) থেকে BA পাস করলেন। সে বারও ফার্স্ট ক্লাস। তারপরেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। কারণ হঠাত্ দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা বা এমার্জেন্সি ঘোষণা করলেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাই অর্থনীতির উপর PhD শুরু করেও শেষ করতে পারলেন না ওই উত্তাল পরিস্থিতিতে।
লিডার চিনতে ভুল করেননি বাম নেতৃত্ব
১৯৭৪ সালে তরুণ সীতারাম জেএনইউ-তে দাপুটে কমিউনিস্ট নেতা। চুটিয়ে SFI করছেন। সীতারামের লিডারশিপ চিনতে ভুল করেননি তত্কালীন বাম নেতৃত্বে। যার নির্যাস, ১৯৭৫ সালে সিপিআইএম-এ যোগ দিলেন। এমার্জেন্সির সময় আন্ডার গ্রাউন্ড ছিলেন কিছু দিন। দেশের জরুরি অবস্থা কাটতেই সীতারামকে JNU-র ছাত্র সংসদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হল। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ সাল, এক বছরে তিনবার ছাত্র সংসদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার নজির জেএনইউ-তে এখনও নেই। ১৯৭৮ সালে SFI-এর সাধারণ সম্পাদক হন সীতারাম ইয়েচুরি। ১৯৮৬ সালে এসএফআই ছেড়ে দেন। ১৯৮৪ সালে সিপিআইএম-এর সেন্ট্রাল কমিটিতে সদস্য হন তিনি। পরবর্তীকালে পলিটব্যুরো সদস্যও হন। ১৯৯২ সালে পার্টি কংগ্রেসের সীতারাম ইয়েচুরি সিপিআইএম-এর পলিটব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হন। সীতারামের পূর্বসূরি হরকিষেণ সিং সুরজিত্ জোট সমন্বয়ের যে ধারা শুরু করেছিলেন, সীতারাম সেই ধারার যোগ্য বাহক ছিলেন, বলাই যায়। ২০০৪ সালে ইউপিএ সরকারকে সমর্থনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিপিআইএম-এর রাজ্যসভার সদস্যও ছিলেন ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত।