হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির মামলায় উঠে আসছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। শুরুতে শুধুমাত্র পাকিস্তান সফর এবং ইউটিউব কনটেন্ট তৈরির কথা বলা হলেও, এখন তদন্তকারীরা দাবি করছেন—এটি নিছক ইউটিউবারের সফর নয়, বরং এটি ছিল একটি সুচিন্তিত ষড়যন্ত্র।
পাকিস্তান থেকে কাশ্মীর, অপারেশন সিঁদুরের ছায়ায় সক্রিয় জ্যোতি
তদন্তে জানা গেছে, জ্যোতি প্রথমে পাকিস্তানে যান, পরে কাশ্মীর সফর করেন। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরে চালানো 'অপারেশন সিঁদুর' চলাকালীন তাঁর গতিবিধি বিশেষভাবে সন্দেহজনক ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই সময় তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা আধিকারিকদের (PIO) সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে ছিলেন এবং হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য আদানপ্রদান করেন বলে অভিযোগ।
পাকিস্তানি হাইকমিশনে সরাসরি যোগাযোগ
২০২৩ সালে দিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করতে গিয়ে জ্যোতির সঙ্গে পরিচয় হয় পাকিস্তানি নাগরিক এহসান-উর-রহিম ওরফে ড্যানিশের। সেই সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীর হয় এবং তিনি কয়েকবার পাকিস্তান সফর করেন। ওই হাইকমিশনের এক আধিকারিক, যাঁকে ভারত সরকার ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে বহিষ্কার করেছে, তাঁর সঙ্গেও জ্যোতির সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে দাবি পুলিশের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার যুদ্ধ?
জ্যোতির ইউটিউব চ্যানেল Travel with Jo এবং ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলের লক্ষাধিক ফলোয়ার রয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এগুলি ব্যবহার করে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছিলেন। গোয়েন্দা মহলের ভাষায়, এটি ‘Narrative Warfare’—যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ব্যবহার করে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ভারতীয় সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
আর কারা জড়িত?
এই মামলায় আরও এক গুরুত্বপূর্ণ নাম সামনে এসেছে—হরকিরত সিং। তিনি হরিয়ানা শিখ গুরুদ্বার ব্যবস্থাপনা কমিটির (HSGMC) পর্যটন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান। তাঁকেও পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, জ্যোতির জন্য দু'বার পাকিস্তানের ভিসা ব্যবস্থা করেছিলেন এবং HSGMC-এর হয়ে একাধিকবার দল পাঠিয়েছেন পাকিস্তানে। এখন পুলিশ তদন্ত করছে যে, এই কমিটির ভিতরে আরও কারা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত।
তদন্তে কী উঠে আসছে?
জ্যোতি মালহোত্রাকে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং BNS 152 ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর মোবাইল, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষাধীন। আর্থিক লেনদেন, বিদেশ ভ্রমণ ও পাকিস্তানি আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও কয়েকজন ইউটিউবার ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারকেও নজরে রেখেছে পুলিশ।