আজ, ১৪ ডিসেম্বর গীতা জয়ন্তী। দুনিয়ায় শ্রীমদ্ভগবত গীতাই একমাত্র বই, যার বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। মহাভারতে কুরক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের সারথী ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সম্মুখ সমরে নিজের পরিজনদের দেখে গাণ্ডীব ত্য়াগ করেন কুন্তীপুত্র। নানা সংশয় ঘিরে ধরে তাঁকে। সখাকে বলেন,''এ যুদ্ধের দরকার কী? জমি-জায়গা, সম্পত্তি আমার চাই না। স্বজনকে হত্যার চেয়ে সন্ন্যাস নিয়ে দোরে দোরে ভিক্ষা করা শ্রেয়।'' অর্জুনকে নিরস্ত করেন মাধব। নিষ্কাম কর্মযোগের পাঠ দেন। ১৮ অধ্যায়ের গীতায় সেই পাঠই রয়েছে। কয়েক হাজার বছর পরও যা মানবজীবনে প্রাসঙ্গিক। গীতার শ্লোক মেনে চলতে পারলে সংশয়মুক্ত ও সুখ জীবন কাটানো যাবে।
প্রশ্ন- শান্তি কীভাবে মিলবে?
উত্তর- চাওয়া-পাওয়া, অহংকার ত্য়াগ করে নিজের কর্ম করাই মানুষের কর্তব্য। নিষ্কাম কর্মই শান্তির পথ। (গীতা দ্বিতীয় অধ্যায়)
প্রশ্ন- জীবনের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর- যে কর্ম আমাদের দেওয়া হয়েছে, তা করে চলতে হবে। কারণ কর্মই জীবনের উদ্দেশ্য। কর্ম ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। (গীতা তৃতীয় অধ্যায়)
প্রশ্ন- কীভবে সাফল্য আসবে?
উত্তর- সাফল্য়ের খিদেই মানুষকে উৎকণ্ঠায় ফেলে। সুতরাং জয়-পরাজয়, লাভ-হানি এসব না ভেবে কর্ম করে চলতে হবে। তাতেই মানুষ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। ফল মানুষের হাতে নেই। সে শুধু নিজের কর্মটুকু করতে পারে। (গীতা তৃতীয় অধ্যায়)
প্রশ্ন- কেন ফলের চিন্তা ত্য়াগ?
উত্তর- জয়-পরাজয় না ভেবে কর্ম করতে হবে। ফলে পরাজয় বা লক্ষ্যপূরণ না হলে মানুষ ভেঙে পড়বে না। আসবে না অবসাদও। আবার জিতলে থাকবে না বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। তা পরের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কর্মফল কারও হাতে নেই। ফলে ফলের চিন্তা না করেই কাজ করতে হবে। স্মরণ করতে হবে ঈশ্বরকে। (গীতা চতুর্থ অধ্যায়)
প্রশ্ন- স্থিতধী কে?
উত্তর- যিনি সুখ-দুঃখ, লাভ-হানিকে সমান জ্ঞান করেন। সুখে উৎফুল্ল হন না। আর দুঃখে ভেঙেও পড়েন না। তিনি আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করেন। ক্রোধকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, ক্রোধ মানুষের বুদ্ধিভ্রমের কারণ। ক্রোধে মানুষ হিতাহিতজ্ঞান হারান।
প্রশ্ন- যোগ কাকে বলে?
উত্তর- কর্ম না করে বসে থাকার ভাবনা ছাড়তে হবে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, মান-সম্মানের চিন্তা না করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। ইন্দ্রিয়র নিয়ন্ত্রণ করে কর্মই প্রকৃত যোগ। (গীতা তৃতীয় অধ্যায়)
প্রশ্ন- কর্ম না করে থাকা যায়?
উত্তর- কর্ম না করে কেউ থাকতে পারে না। সকল প্রাণীই প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণে। প্রকৃতির নিয়মে কর্ম করে চলতে হবে। কর্মই জীবনের মূল কথা। (গীতা তৃতীয় অধ্যায়)
প্রশ্ন- কোন কোন জিনিস খারাপ পথে নিয়ে যায়?
উত্তর- কাম, ক্রোধ ও লোভ নরকের দ্বার। এর ফলে জীবনে আসে অশান্তি। তাই এগুলিকে ত্য়াগ করা দরকার। (গীতা ষষ্ঠদশ অধ্যায়)
প্রশ্ন- সুখ-শান্তি কারা পান?
উত্তর- যাঁরা কর্ম করেন না, যাঁরা অজ্ঞানী তাঁরা তো শান্তি ও অশান্তির ফারাকই করতে পারেন না। জ্ঞানী ব্যক্তিই তা পারেন। ফলে এই ধরনের ব্যক্তিরা শান্তি পান না। (গীতা তৃতীয় অধ্যায়)