শরীরে ট্যাটু তৈরি করলে কি কোন লাভ হয়? ট্যাটু তৈরি করলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় কি? এমনকী এই ট্যাটু যে আমাদের শরীরের সৌন্দর্য বাড়ায়, তা কি ট্যাটু তৈরি করলে শরীরের সমস্যা তৈরি হয়? ট্যাটু কি আমাদের মনের উপর কোনও প্রভাব ফেলে? ট্যাটু আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে? এই সমস্ত প্রশ্ন আমাদের মধ্যে কিন্তু ঘুরপাক খায়। যারা ট্যাটু করে বা যারা ট্যাটু করে না, সবাই এই বিষয়টি জানতে চান। উপরে যে কটি প্রশ্ন রাখা ছিল, তার সব কটি প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ। তবে কীভাবে, আসুন জেনে নিই...
ট্যাটু আমাদের শরীরের উপর মনের উপর এবং জীবনের উপর সোজাসুজি প্রভাব ফেলে। ট্যটু যদি কোনও আকৃতির রূপে থাকে, অর্থাৎ যদি আপনি নিজের শরীরে কোনও জিনিসের আকৃতি তৈরি করেন, তাহলে তার প্রভাব আপনার মন, শরীর এবং ব্যবহারের উপর প্রবলভাবে পড়ে। উদাহরণের জন্য আমরা বলতে পারি যে, কোনও ধার্মিক চিহ্ন আপনার শরীরে যদি ট্যাটু রূপে আপনি তৈরি করেন, যেমন মনে করুন যে আপনি কোনও ওম বা স্বস্তিক বা ত্রিশূল এর ছবি ট্যাটু রূপে নিজের শরীরে তৈরি করেন, তাহলে আপনার লাভ তখনই হবে যখন আপনি সেটির আকৃতি সঠিকভাবে তৈরি করবেন। আপনার মন প্রসন্ন থাকবে, কনফিডেন্স বাড়বে, কাজ সফল হবে।
কিন্তু যদি ট্যাটু স্টাইলিশ হয় বা কিছু নতুন করার চক্করে যদি ওম বা স্বস্তিকের আকৃতি বিকৃত করে দেন, তাহলে নেগেটিভ প্রভাব আপনার মন শরীর এবং ব্যবহারের উপর পড়বে।
সবার আগে প্রভাব মনের ওপর পড়ে। আপনার মনে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা বাসা বাঁধে। আচমকা আপনি টেনশনে থাকতে শুরু করেন, আচমকা আপনার ব্যবহার বদলে যায়, এমনকী লোকেরা আপনাকে পাগলও বলতে পারে। আরও অনেক কিছুই হতে পারে।
মন এবং ব্যবহারে নেগেটিভিটি বাড়ার সঙ্গে শরীরের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। মানসিক রোগ এবং একাধিক শারীরিক রোগও আপনাকে ও আপনার শরীরকে কাবু করে ফেলতে পারে।
এ জন্য ট্যাটু খুব চিন্তা ভাবনা করে তৈরি করানো উচিত। ফিল্মি দুনিয়া এবং খেলার জগতের সঙ্গে জড়িত। বিশ্ব জুড়ে অনেক প্রসিদ্ধ লোক রয়েছে, যারা ট্যাটু তৈরি করিয়েছেন। কিন্তু তাদের লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হয়েছে। কিছু লোকের লাভও হয়েছে, কারণ ট্যাটুর আকৃতি বা ডিজাইন ঠিকঠাক তৈরি করা হয়েছিল। তাই কার কাছে, কোথা থেকে ট্যাটু বানাচ্ছেন সে বিষয়টি ভালো করে নজরে রাখা উচিত। বিশেষ করে ধর্মীয় চিহ্ন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা উচিত নয়। তাতে সমস্যা তৈরি বেশি হয়।
জ্যোতিষের সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। শরীর এবং মনের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি জিনিসই জ্যোতিষের সঙ্গে সংযুক্ত। এভাবে আপনি আপনার শরীরে কী রঙের কাপড় বা জামা পড়বেন, জুতো কেমন হবে, আংটি চেন বা কোনও গয়না পড়তে পারেন, সেটির সম্পর্কও গ্রহের সঙ্গে জড়িত। একইভাবে ট্যাটুও শরীরের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এমনকী শরীরে সাধারণ ক্রিম-পাউডার লাগানোর সম্পর্ক গ্রহের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হয়। শরীরে কোন অঙ্গে দুর্বল থাকলে, তাতে ঘাটতি থাকলে সেখানে বিশেষ গ্রহের সঙ্গে জড়িত বলে দেখা যায়। যদি চোখ আপনার কমজোর থাকে, তাহলে তার সম্পর্ক সূর্য গ্রহের সঙ্গে বলে মনে করা হয়। ত্বকের সমস্যা থাকলে তার সম্পর্ক বুধ গ্রহের সঙ্গে বলে মনে করা হয়। শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ কোনও না কোনও গ্রহের সঙ্গে জড়িত। তাই কোনও জ্যোতিষী আপনার শরীরের কুণ্ডলী দেখে রোগ সম্পর্কে জানিয়ে দিতে পারেন। কারণে যখন শরীরে ট্যাটু তৈরি করা হয় তার সঠিক আকৃতি এবং সঠিক জায়গায় না হলে তা বিরূপ প্রভাব তৈরি করে এবং জীবন পর্যন্ত ছাড়খার করে দিতে পারে। যার প্রভাব ঘর-পরিবার বন্ধু, কেরিয়ার এবং সমাজের উপর পড়ে।
ট্যাটু তৈরি করার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত
ট্যাটু তৈরি করার সময় আমাদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। ট্যাটুর যে আকৃতি বানান না কেন, তা যেন স্পষ্ট হয়।
ট্যাটুর মধ্যে দিয়ে যে মেসেজ আপনি দিতে চান, তা যেন পরিষ্কার থাকে। অস্পষ্ট ইমেজ বানাবেন না।
ট্যাটু শরীরের কোন অঙ্গে বানাচ্ছেন, তা তার আকৃতি এবং তার অঙ্গের সঙ্গে তৈরি করা কতটা অনুকূল তা আগে জেনে নিন।
পার্মানেন্ট ট্যাটু তৈরি করার আগে এটি আপনার জন্য কতটা জরুরি এ বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে আপনি ট্যাটু করান। প্রয়োজনে আগে অস্থায়ীভাবে বানিয়ে তার প্রভাব দেখে নিন। ট্যাটু করার পর তা যদি বিরূপ প্রভাব না ফেলে তাহলে তা স্থায়ী করতে পারেন।
শরীরে কোনও অঙ্গে কারও নাম, কোনও চিহ্ন, কোনও লেখা তৈরি করার পরম্পরা আমাদের দেশে বহু বছর আগের। আজ থেকে হাজার বছর আগে লোকেরা নাক, গলা, পেট অথবা হাতে কিছু লিখে নিতেন বা কোনও চিহ্ন এঁকে নিতেন। যাকে আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাষায়, আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয়। কিছু এলাকায় আজও একে গোদনা বলা হয়। কোথাও বলা হয় উল্কি। সেটাই আজকে ইংরেজিতে ট্যাটু বলা হয়। বানাতে চাইলে বানান, কিন্তু তার আগে সুনিশ্চিত হয়ে নিয়ে তারপরেই বানান।