হিন্দুদের বিভিন্ন পার্বণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল অক্ষয় তৃতীয়া (Akshay Tritiya)। শুধু বাঙালি নয়, গোটা দেশের হিন্দুদের জন্যেই এই উৎসব অত্যন্ত শুভ। যে কোনও কাজ সম্পন্ন করার জন্য এদিন অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
সংস্কৃত অনুসারে 'অক্ষয়' শব্দের অর্থ হল 'যার কোনও ক্ষয়' নেই অর্থাৎ যা কখনোও শেষ হয় না। তাই মনে করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ায় করা যে কোনও কাজ অক্ষয় থাকে। সেই সঙ্গে শাস্ত্র মতে, অক্ষয় তৃতীয়া সুখ প্রদানকারী এবং পাপ নাশকারী তিথি।
অক্ষয় তৃতীয়া ২০২২-এ শুভ যোগ (Akshaya Tritiya 2022 Auspicious Yoga)
বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে 'অক্ষয় তৃতীয়া'র পুজো হয়। এই বছর এই তিথিতে থাকবে রোহিণী নক্ষত্র। তাই এই বিশেষ দিনে তৈরি হবে শুভ যোগ। এদিন স্নানদানে অক্ষয় ও অনন্ত পুণ্যফল হবে। এছাড়াও ভোজ্যসহিত জলপূর্ণ ঘটদানে সূর্যলোকে গমনে বিশেষ ফল মিলবে।
আরও পড়ুন: সন্তানের মঙ্গল কামনায় মায়েরা পালন করেন শিবের ব্রত! জানুন এবছরের নীলষষ্ঠীর দিনক্ষণ
অক্ষয় তৃতীয়া ২০২২-র দিনক্ষণ (Akshaya Tritiya 2022 Date & Time)
* আগামী ৩ মে (বাংলায় ১৯ বৈশাখ) অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ তিথি পড়েছে।
* ২ মে রাত ৩:১৭ মিনিট থেকে ৩ মে ভোর ৫: ২৫ মিনিট পর্যন্ত তৃতীয়া থাকবে। এই বছর দীর্ঘক্ষণ থাকছে তৃতীয়া।
অক্ষয় তৃতীয়া ২০২২-র অমৃতযোগ (Akshaya Tritiya 2022 Amrita Yoga)
দিবা ঘ ৭।৩৭ গতে ১০। ১৪ মধ্যে ও ১২।৫১ গতে ২।৩৬ মধ্যে ও ৩।২৯ গতে ৫।১৩ মধ্যে এবং রাত্রি ঘ ৬।৪৯ মধ্যে ও ৯।০ গতে ১১।১১ মধ্যে ও ১।২২ গতে ২।৪৯ মধ্যে।
আরও পড়ুন: সামনেই বাংলা নববর্ষ! জানুন এই উৎসবের দিনক্ষণ, মাহাত্ম্য
অক্ষয় তৃতীয়ার পুজো (Akshaya Tritiya Puja)
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মূলত লক্ষ্মী- গণেশ পুজোর আয়োজন করা হয়। বিশেষত ব্যবসায়ীরা নিষ্ঠা করে এদিন সিদ্ধিদাতা ও ধনদেবীর আরাধনা করেন। অনেকে দোকানে এই বিশেষ দিন হালখাতাও হয়। শুধু দোকান নয়, অনেকে বাড়িতেও পুজো করেন। বিভিন্ন মন্দিরে ভক্তেরা ভিড় জমান। বিশ্বাস করা হয় যে, এদিন সোনা কিনলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি ঘটে। এছাড়াও গারি-বাড়ি কেনা, নতুন ব্যবসা শুরু কিংবা বিয়ের পাকা কথা- আশীর্বাদও এদিন অনেকে করেন, শুভ সূচনার আশায়।
অক্ষয় তৃতীয়া-র মাহাত্ম্য (Akshaya Tritiya Significance)
অক্ষয় তৃতীয়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েকটি পুরাণের কথা। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই পরশুরাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেজন্যেও এই দিনটি শুভ।
চলতি পৌরণিক কথা অনুসারে, বিষ্ণুর নবম অবতার কৃষ্ণ দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণ করেন মর্ত্যে । তাঁর সুদামা নামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বন্ধু ছিলেন। সুদামা একদিনব ভুলবশত কৃষ্ণের সব খাবার খেয়ে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি শ্রীকৃষ্ণকে খাবার দিতে একমুঠো চাল নিয়ে তাঁর ঘরে আসেন। তাঁকে খাওয়ানোর জন্য বন্ধু সুদামার এই আচরণ মুগ্ধ করেছিল শ্রীকৃষ্ণকে। এরপর শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে সুদামার সমস্ত দারিদ্র্য ঘুচে যায়। মনে করা হয় যেদিন এই ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। তাই দিনটি বিশেষ শুভ।
আরও পড়ুন: এপ্রিল থেকে এই ৩ রাশির ওপর সদয় হবেন শনিদেব! চাকরি- বিয়ের সুখবর সহ, আয় বৃদ্ধির যোগ
শোনা যায় মহাভারতে কৌরবদের কাছে পাশা খেলায় হেরে বারো বছরের জন্য বনবাস ও এক বছরের জন্য অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন পাণ্ডবরা। তাঁদের বনবাসে থাকার সময়ে ফের কৌরবদের চক্রান্তে মুনি দুর্বাসা তাঁর শিষ্যদের নিয়ে এক রাতে পাণ্ডবদের আশ্রয় গ্রহণ করতে যান। কিন্তু সেই সময় তাঁদের ঘরে কোনও অন্ন ছিল না। ক্ষুধার্ত মুনি দুর্বাসা অভিশাপ দেবেন ভেবে ভয় পান পাণ্ডব ও দ্রৌপদী। ঠিক সেই সময়ে শ্রীকৃষ্ণ এসে হাঁড়ির তলায় লেগে থাকা একটিমাত্র চালের দানা খেয়ে নেন। আর অবাক করা বিষয়, তাতেই পেট ভরে যায় দুর্বাসা ও তাঁর শিষ্যদের। দুর্বাসার অভিশাপ থেকে এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনই পাণ্ডবদের রক্ষা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই এই দিন্টিকে শুভ বলে মনে করা হয়।