হাতে আর মাত্র আড়াই মাস। তারপরই নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পালা। পুরনো যা কিছু ভুলে, নতুন করে সব শুরু করার সময়। কিন্তু সেই নতুন শুরুটা ভাল হবে তো? এই আশঙ্কা থাকে সকলের মনেই। কেমন কাটবে ২০২৬ সাল? আগামী দিনে পৃথিবীতে কী কী হতে চলেছে? এ সব কিছুরই আগাম পূর্বাভাস দিয়েছেন ভবিষ্যদদ্রষ্টা বাবা ভাঙ্গা।
১৯৯৬ সালে মারা যাওয়ার আগে তিনি যে কথা বলে গিয়েছিলেন তার বেশির ভাগই নাকি অক্ষরে অক্ষরে ফলে। বার্লিন প্রাচীর পতন, আমেরিকায় ৯/১১-র হামলা, রাজকুমারী ডায়ানার মৃত্যু, চেরনোবিল বিপর্যয়, এমনকী করোনা ভাইরাসের হানার মতো ঘটনাগুলির সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বুলগেরিয়ার এই ভবিষ্যদদ্রষ্টা। এবার তার ২০২৬-এর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি মিলিয়ে দেখার পালা।
২০২৫ সালেই পৃথিবীর অন্তিম পর্ব শুরু হয়ে যাচ্ছে বলেও আগাম জানিয়ে গিয়েছেন বাবা ভাঙ্গা। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিনগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠার মতো ঘটনাগুলিও ঘটবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
এবার ২০২৬ সালের ভবিষ্যদ্বাণীর ঝুলিতে কী কী রয়েছে?
বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০২৬ সালে একটি ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেবে। যা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিতে পারে। একইসঙ্গে তিনি গণনা করে জানিয়ে গিয়েছেন, আগামী বছর বিশ্বের পূর্বাঞ্চলে একটি যুদ্ধ শুরু হবে। তা ধীরে ধীরে পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়বে। এবার মধ্য প্রাচ্যের একাধিক দেশের মধ্যে বর্তমান সংঘর্ষের আবহ সেদিকেই ইঙ্গিত করছে বলে অনেকেই কার্যত বিশ্বাস করা শুরু করেছেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০২৬ সালে বাস্তুতন্ত্র যদি বিঘ্নিত হয় তাহলে তা শেষের সূচনা করে দেবে বলেই মনে করেন অনেকে।
স্কাই হিস্ট্রি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ সালের নভেম্বরে একটি বিশাল মহাকাশযান পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে বলে সবচেয়ে ইতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বুলেগেরিয়ার এই 'নস্ত্রাদামুস'। তবে আবার ভয়াবহ ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি এবং চরম আবহাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন বাবা ভাঙ্গা। পূর্বাভাস দিয়েছেন, ২০২৬ সালেই নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবীর ৮ শতাংশ স্থলভাগ। তবে বিশ্বের কোন অংশে এই বিপর্যয় ঘটবে তা অবশ্য বোলেননি এই ভবিষ্যদদ্রষ্টা মহিলা।
তিনি ২০২৬ সালে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছিলেন, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি পরমাণু যুদ্ধ হবে কি না, সে বিষয়ে তিনি মৃত্যুর আগে কোনও মন্তব্য করে জাননি।
আরও একটি চমকপ্রদ পূর্বাভাসে তিনি জানিয়েছিলেন, মানুষ ২০২৬ সালে শুক্র গ্রহ বা ‘মর্নিং স্টার’-এর দিকে নজর দেবে নতুন শক্তির উৎস খুঁজে পেতে। বিজ্ঞানীরা হয়তো এ সময় ওই গ্রহে শক্তি আহরণের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা শুরু করবেন। এছাড়াও বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্রুত বিকশিত হয়ে মানুষের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে বড় প্রভাব ফেলবে।
ভবিষ্যতের গণনা
বাবা ভাঙ্গা জানিয়ে গিয়েছেন, ২০৪৩ সালের মধ্যে ইউরোপে মুসলিম শাসন আধিপত্য বিস্তার করবে। ২০৪৬ সালের মধ্যে চিকিৎসকরা সম্পূর্ণ কৃত্রিম বা সিনথেটিক অঙ্গ ব্যবহার করে জীবন বাঁচাতে পারবেন। ২০৭৬ সালের মধ্যে বিশ্ব জুড়ে কমিউনিস্ট শাসন পুনরায় কায়েম হবে বলে জানিয়ে গিয়েছেন তিনি।
বাবা ভাঙ্গা তাঁর জীবদ্দশায় প্রায় ৫০৭৯টি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এর মধ্যে অনেকগুলিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক দশক পরেও, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। উল্লেখ্য, বাবা ভাঙ্গার আসল নাম ছিল ভ্যাঞ্জেলিয়া পান্ডেভা দিমিত্রোভা। ১২ বছর বয়সে, এক প্রচণ্ড ঝড়ের সময় তার চোখে বালি ঢুকে যাওয়ার পর তিনি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এরপর, তিনি ভবিষ্যৎ দেখার অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করেন। ধীরে ধীরে লোকেরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে তার কাছে আসতে শুরু করে। তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে ভবিষ্যদ্বাণী করতে থাকেন এবং ১১ অগাস্ট, ১৯৯৬ সালে মারা যান।