Buddha Purnima 2025: আজ ১২ মে বুদ্ধ পূর্ণিমা। এই দিন গৌতম বুদ্ধের জন্মতিথি পালন করা হয়। বুদ্ধের জীবন নানা শিক্ষামূলক ঘটনার সাক্ষী। তেমনই এক ঘটনা জানতে পারবেন এই প্রতিবেদনে।
একবার গৌতম বুদ্ধের এক শিষ্য আনন্দকে এক যৌনকর্মী তাঁর বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধ তাঁকে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে বলেন। তারপরেই এই নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। ঠিক কী ঘটেছিল সেই সময়? আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই কাহিনি।
গৌতম বুদ্ধ সবসময় তাঁর শিষ্যদের নিয়ে পদব্রজে ভ্রমণ করতেন। কিন্তু বর্ষার সময় এক জায়গায় আড়াই মাস থাকার নিয়ম ছিল। যদিও সাধারণ সময় কোনও ভিক্ষু কোনও জায়গায় দুই দিনের বেশি থাকতেন না। এর পিছনে ভাবনা ছিল খুব সহজ। একটানা কোথাও থাকলে তাঁদের সাহায্যকারী গৃহস্থ পরিবার বিব্রত হতে পারে। তাঁদেরই উল্টে কষ্ট হতে পারে। সেই কারণেই এক জায়গায় ২ দিনের বেশি তাঁরা থাকতেন না। ভিক্ষুরা সাধারণত জঙ্গলের রাস্তা ধরেই চলাফেরা করতেন। কিন্তু বর্ষায় জঙ্গলের রাস্তা যে বেশ বিপজ্জনক, তা বলাই বাহুল্য।
এভাবেই পদব্রজে চলতে চলতে, তাঁরা একদিন একটি গ্রামে পৌঁছান। আশ্রয়ের খোঁজে ছিলেন বুদ্ধ ও তাঁর শিষ্যরা। সেই সময় আনন্দ নামে এক শিষ্যকে এক যৌনকর্মী নিজ বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানান। সেই নারী ছিলেন অত্যন্ত রূপবতী। আনন্দ বলেন, তিনি থাকতে পারেন, তবে বুদ্ধের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। যৌনকর্মী অবাক হয়ে বলেন, 'তোমাকে কি সত্যিই অনুমতি নিতে হবে?' আনন্দ বলেন, 'আমি জানি বুদ্ধ রাজি হবেন। কিন্তু অনুমতি চাওয়াটাই নিয়ম।'
তারপর আনন্দ বুদ্ধের কাছে যান। বলেন, 'এই গ্রামে আমরা তিনদিন বিশ্রাম নেব। একজন মহিলা, যিনি পেশায় যৌনকর্মী, আমায় তাঁর বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি কি তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারি?' বুদ্ধ শান্তভাবে হেসে বলেন, 'যদি সে এত ভালোবাসে আমন্ত্রণ করে, তবে তার অপমান করা উচিত নয়। যাও, তার বাড়িতেই থাক।'
বুদ্ধের এই কথা অন্য শিষ্যদের ভালো লাগেনি। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, 'আপনি কীভাবে একজন ভিক্ষুকে যৌনকর্মীর বাড়ি পাঠালেন? এটা তো আমাদের আচরণের পরিপন্থী।' বুদ্ধ বলেন, 'তিন দিন অপেক্ষা করো। উত্তর পাবে।'
আনন্দ তিন দিন সেই যৌনকর্মীর বাড়িতে থাকেন। বাকি শিষ্যরা গোপনে নজরদারি শুরু করে। প্রথম দিন গান শোনা যায়। শিষ্যরা ভাবে আনন্দের চরিত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দিন গানের সঙ্গে নাচ হচ্ছে বলেও টের পাওয়া যায়। তারা একপ্রকার ধরেই নেয় যে তাদের গুরুভাইয়ের বারোটা বেজে গিয়েছে!
তৃতীয় দিন তারা জানলা দিয়ে দেখে আনন্দ ও ওই মহিলা নাচছে-গাইছে। ততক্ষণে অবশ্য ব্যাপারটা একটু গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। সবাই একরকম ধরেই নেয় যে, আনন্দ আর তাদের দলে ফিরবে না।
পরের দিন সকল ভিক্ষুদের গ্রাম ছাড়ার কথা। সেই মতো গ্রামের চকে সবাই জড়ো হয়। আনন্দ আসবে না বলেই সবাই ধরে নিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ দেখা যায়, আনন্দ এক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে আসছেন। কিন্তু সেই মহিলা এখন আর যৌনকর্মী নন—তিনি এখন এক ভিক্ষুণী। সবাই হতবাক। বুদ্ধ হাসিমুখে বলেন, 'যদি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তবে কেউ তোমাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে পারবে না। বরং তুমি দুর্নীতিগ্রস্তকেও চরিত্রবান করে তুলতে পার।'
এই বলে বুদ্ধ সেই ভিক্ষুণীকে স্বাগত জানান। সবাই আবার যাত্রা শুরু করে।
বুদ্ধের এই কাহিনী থেকে জানা যায়, আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে কেউ আমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারে না। চরিত্রই আসল আমাদের শক্তি। খারাপটা অন্যের মধ্যে নয়, আমাদের মনেই থাকে। মন পরিষ্কার রাখলে, দুনিয়াও পরিষ্কার দেখায়।