গোটা এপ্রিল মাস জুড়ে বাঙালিদের নানা পুজো ও আচার অনুষ্ঠান রয়েছে। চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে (Chaitra Sankranti) পালিত হয় আরও এক হিন্দুদের অনুষ্ঠান, চড়কের পুজো (Charak Puja)। এই পুজোর সূচনা নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। আসুন জানা যাক যুগ যুগ ধরে প্রচলিত এই পুজোর সঙ্গে জড়িত কাহিনি।
লোককথা অনুযায়ী প্রচলিত যে, ১৪৮৫ সালে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা চড়কের পুজোর প্রচলন করেন। যদিও রাজ পরিবারের লোকেরা এই পুজো শুরু করলেও চড়ক পুজো কখনও কোনও রাজবাড়ির পুজো ছিল না। এটি ছিল হিন্দু সমাজের এক প্রচলিত লোক সংস্কৃতি। তবে সাধারণত সব পুজোয় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকের প্রয়োজন হলেও এক্ষেত্রে কিন্তু নিয়ম একটু আলাদা। শোনা যায়, যেহেতু চড়ক পুজোর সন্ন্যাসীরা ছিলেন হিন্দু ধর্মের তথা কথিত নীচু সম্প্রদায়ের লোক। তাই এই পুজোয় এখনও কোনও ব্রাহ্মণ লাগে না।
তবে চড়কের পুজোর রয়েছে আরও ভিন্ন নাম। পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলায় একেক নামে এই পুজো-আচার পালন করা হয়। গম্ভীরা পূজা, শিবের গাজন, নীল পুজো ইত্যাদি ভিন্ন নামে চড়ক পুজো করা হয়।
চড়ক পুজোর নিয়ম
চড়ক পুজোর আগের দিন চড়ক গাছকে পরিষ্কার করে, জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয় সেখানে। এই প্রতীক শিবলিঙ্গটি 'বুড়োশিব' নামে পরিচিত। এই পুজোর পৌরোহিত্য করেন পতিত ব্রাহ্মণেরা। তবে আরও বিশেষ কিছু রীতি রয়েছে চড়ক পুজোর, যা শুনে অনেকের গায়ে কাঁটা দিতে পারে। কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত ছাইয়ের ওপর হাঁটা, কাঁটা, ছুরি বা ধারালো কিছুর ওপর লাফানো, শিবের বিয়ে,অগ্নিনৃত্য ইত্যাদি এই পুজোর বিশেষ অঙ্গ হিসাবে মনে করা হয়।
চড়ক পুজোর সঙ্গে জড়িত বিশ্বাস
গ্রাম বাংলায় এই সব পুজোর সঙ্গে রয়েছে ভূতপ্রেত বা পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস।মনে করা হয় নানা রকমের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ। চড়কগাছের সঙ্গে ভক্তদের লোহার হুড়কো দিয়ে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানোর রীতি আছে। সেই সঙ্গে পিঠে, হাতে, পায়ে, জিভে এবং শরীরের অঙ্গে লোহা গেঁথে দেওয়া হয়। যদিও ১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এটি বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে আজও গ্রামবাংলার অনেক স্থানে এই ভাবে চড়ক পুজো পালন করা হয়। মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলিতে চড়ক উৎসব বেশি করে পালিত হয়।
আরও পড়ুন: এই পুজোয় সন্তানের মঙ্গল হয়! জানুন নীলষষ্ঠীর নিয়ম কানুন
পশ্চিমবাংলার ভিন্ন স্থানে চড়ক
নদীয়া জেলার শান্তিপুরের জলশ্বর শিবের গাজন উপলক্ষে শত বছরের পুরনো মেলা বসে। তারকেশ্বর ধামেও গাজনের মেলা বসে। এছাড়াও বাঁকুড়া জেলার খামারবেড়ে গ্রামে, হুগলীর চণ্ডীপুর গ্রাম সহ আরও একাধিক স্থানে শিবের গাজন ও চড়কের জন্য বিশেষ মেলা বসে।