Kalipuja 2022: দু'বছর খানিকটা জৌলুসহীনভাবে পুজোর পর ফের জাঁকজম ফিরছে চারণকবি মুকুন্দদাস নির্মিত মন্দিরের কালীপুজোয়। শিলিগুড়ির কালীবাড়ি রোডে আনন্দময়ী কালীবাড়ির পুজোয় অবশ্য জাঁকজমকের চেয়ে ঐতিহ্য আর ইতিহাস বেশি টানে। প্রচুর মানুষ ভিড় জমান শুধু ঐতিহাসিক মন্দিরের টানেই। পাশাপাশি ভোগ খেতেই হাজির হন প্রচুর মানুষ।
চারণকবির মন্দির
এই মন্দিরের পরতে পরতে ইতিহাস জড়িয়ে। কারণ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা চারণকবি মুকুন্দ দাস নিজে। শুরুর দিকে কিছুটা খুঁড়িয়ে চললেও, পরে যত দিন গিয়েছে প্রতি বছর উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি পেয়েছে এই পুজোর কলেবরে। এখন তো এটি রীতিমতো প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সামাজিক কাজ, সস্তায় থাকার বন্দোবস্তের জন্য লজের বন্দোবস্ত করেছেন তাঁরা। তবে সবটাই সাত্ত্বিক মতে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকার কারণে রাজ্যের অন্যান্য ধর্মীয় স্থান নিয়ে পর্যটনদপ্তর যে ট্যুরিজম সার্কিট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে, সেই সার্কিটে যুক্ত করা হয়েছে কালীবাড়িকে।
১৯২৪ সালে শিলিগুড়িতে গা ঢাকা দিয়েছিলেন চারণকবি
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় চারণকবি মুকুন্দ দাসের ভূমিকা সবাই জানেন। বিপ্লবী ও দেশবাসীদের নিজেদের গানের মাধ্যমে আন্দোলনে শামিল হওয়ার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় স্বদেশী গান ও নাটক রচনা করে ব্রিটিশ শাসকদের বিষ নজরে পড়েন। তখন ১৯২৪ সালের মে মাসে বরিশাল থেকে পালিয়ে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন চারণকবি। সে সময় ব্রিটিশদের রোষনজরে পড়েন তিনি।
মুকুন্দদাসের তহবিলেই তৈরি হয় মন্দির
কালীবাড়ির পাশেই ডিআই ফান্ড মার্কেট ছিল। যা এখনও রয়েছে। পাশে, বর্তমানে শিলিগুড়ি থানার পিছনে একটি টিনের তৈরি কালীবাড়িতে আশ্রয় নেন। সে সময় মন্দিরের পরিস্থিতি দেখে গান গেয়ে মন্দির পাকা করার উদ্যোগ নেন। মাস খানেক গান গেয়ে পাঁচশো এক টাকা দক্ষিণা সংগ্রহ করে তা মন্দির গড়ার জন্য দান করেছিলেন। ১৯২৬ সালে মন্দির স্থায়ীভাবে স্থাপন হয়। কাশী থেকে আনন্দময়ী কালীমূর্তি এনে মন্দিরে স্থাপন করা হয় সেই সময়। মন্দিরের নাম আনন্দময়ী কালীবাড়ি নামকরণ করেছিলেন চারণকবি নিজেই। তিনি পরে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কলকাতায় ফিরে গেলেও মন্দির থেকে যায় তাঁর স্মৃতি হিসেবে।
দেশের বিপ্লবীরা জড়ো হতেন এখানে
জানা গিয়েছে, পুজোর সময় সারা দেশ থেকে বিপ্লবীরা মন্দিরে একত্রিত হতেন। লাঠিখেলা, ব্যায়ামের মতো শারীরিক কসরত করতেন। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশদের পরাজিত করতে স্বাধীনতা সংগ্রামের একাধিক পরিকল্পনাও ওই মন্দিরে করা হত। কালীপুজো তো আগে থেকে হতই, তবে সে সময় প্রথম শুরু হয় দুর্গাপুজোও। রথের দিন থেকে প্রতিমা শিল্পী মন্দির প্রাঙ্গণেই মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করতেন। তবে বর্তমানে রাজস্থান থেকে মার্বেলের মূর্তি এনে কালীর পাশাপাশি স্থায়ী দুর্গামূর্তি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্দির কমিটি।