Hanuman Jayanti 2025: আজ, ১২ই এপ্রিল, সারা দেশজুড়ে পালন করা হবে ভক্তদের প্রিয় হনুমান জয়ন্তী। এই দিনে সবাই পূজো করেন সঙ্কটমোচন হনুমানজিকে—যিনি তার ভক্তদের সমস্ত বিপদ, ভয় আর বাধা থেকে রক্ষা করেন। তিনি শুধু শক্তির প্রতীক নন, ভক্তিরও এক অসীম উদাহরণ।
আমরা অনেকেই জানি হনুমানজী হলেন শিবের একাদশ অবতার, যিনি ত্রেতাযুগে ভগবান রামের সেবার জন্য এই রূপ ধারণ করেছিলেন। কিন্তু আপনি কি কখনও শুনেছেন হনুমানজীর পঞ্চমুখী রূপের কথা? না শুনে থাকলে, চলুন আজ সেই অবিশ্বাস্য কাহিনি একেবারে বাংলায়, আবেগে গাঁথা রূপে শুনে নিই।
অহিরাবণ ও পঞ্চমুখী হনুমানের কাহিনি
রামায়ণের এক পর্যায়ে, যখন রাবণ ও ভগবান রামের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ চলছে, তখন রাবণ সাহায্যের জন্য ডাকে তার ভাই, পাতাললোকের রাজা অহিরাবণকে। খুবই শক্তিশালী, তান্ত্রিক ক্ষমতাসম্পন্ন অহিরাবণ কৌশলে রাম ও লক্ষ্মণকে অজ্ঞান করে টেনে নিয়ে যায় পাতাললোকে। সেখানে সে পাঁচটি আলাদা আলাদা দিক দিয়ে প্রদীপ জ্বালায়।
এই পাঁচটি দীপ মা ভবানীর আশীর্বাদে অহিরাবণের জীবনরেখা হয়ে দাঁড়ায়—যতক্ষণ না কেউ একসঙ্গে পাঁচ দিকের পাঁচটি দীপ নেভাতে পারে, ততক্ষণ তাকে কেউ মারতে পারবে না।
এ খবর পেয়ে বিভীষণ বিষয়টা জানান হনুমানজীকে। আর এই খবর পাওয়া মাত্রই হনুমান এক মুহূর্তও দেরি না করে ছুটে যান পাতাললোকে। সেখানে তার সাথে দেখা হয় তারই পুত্র মকরধ্বজের, যিনি পাতাললোকের দ্বাররক্ষক। হ্যাঁ, এই যাত্রায় হনুমানজীকে তার নিজের ছেলের সাথেই লড়তে হয়। পুত্রকে পরাজিত করে অবশেষে তিনি প্রবেশ করেন পাতাললোকে।
পাতাললোকের ভিতর অহিরাবণ জাদুর ঘেরাওয়ে রাম-লক্ষ্মণকে বন্দি করে রেখেছে। এবার তার মোকাবিলা করতে হনুমানজী গ্রহণ করেন তার ভয়ংকর ও মহাশক্তিশালী পঞ্চমুখী রূপ। কারণ, একমাত্র এই রূপেই পাঁচটি মুখ দিয়ে একসঙ্গে পাঁচটি দিকের দীপ নিভানো সম্ভব।
পঞ্চমুখের অর্থ কী?
১. পূর্ব মুখ – হনুমান নিজ মুখ, শক্তি ও ভক্তির প্রতীক
২. পশ্চিম মুখ – গরুড় মুখ, যিনি সমস্ত অশুভ শক্তি ধ্বংস করেন
৩. উত্তর মুখ – বরাহ মুখ, যিনি ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধি দেন
৪. দক্ষিণ মুখ – নরসিংহ মুখ, যিনি ভয় ও দুষ্ট শক্তিকে শেষ করেন
৫. উপরের মুখ – হয়গ্রীব মুখ, জ্ঞানের প্রতীক, যিনি সকল বাসনা পূর্ণ করেন
এই পাঁচটি দীপ নিভিয়ে হনুমানজী শেষমেশ বধ করেন অহিরাবণকে এবং মুক্ত করেন রাম-লক্ষ্মণকে। এই মহাকাব্যিক পর্ব আমাদের শিখিয়ে দেয়—ভক্তি, বুদ্ধি আর সাহস মিললে কোনো অশুভ শক্তি শেষ পর্যন্ত টিকতে পারে না।
যতই অন্ধকার আসুক, যতই শক্তিশালী হোক প্রতিপক্ষ, ভক্তির দীপ্তিতে সবকিছুই সম্ভব। আর হনুমানজী ঠিক সেই ভক্তির শক্তি, যিনি প্রতিকূলতাকে জয় করেন নিজের অসীম সাহস আর বিশ্বাস দিয়ে। তাই, এবার হনুমান জয়ন্তীতে, শুধু প্রণাম নয়, তার শিক্ষা ও শক্তিকেও হৃদয়ে ধারণ কর।