বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। তবে অনেক উৎসবগুলির মধ্যে সকলের পছন্দের তালিকায় প্রথমের দিকেই থাকে দোল (Dolyatra) বা হোলি (Holi)। তবে শুধু বাঙালি নয়, ভারতবর্ষের বেশির ভাগ স্থানেই রঙের উৎসব পালন করা হয় মহা সমারোহে। সাধারণত ফাল্গুন মাসেই হয় দোল উৎসব।
রঙের উৎসবে কম বেশি সামিল হন সকলেই। আর এই বিশেষ দিন উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় পুজোও হয়। তবে অনেকরই অজানা, দোল আর হোলি কিন্তু আসলে আলাদা। এই উৎসবের আয়োজন ও পালনের আঙ্গিক অনেকটা এক হলেও বুৎপত্তিগত দিক থেকেই হোলি এবং দোল দুটি উৎসব। জেনে নিন বিস্তারিত...
দোলযাত্রা উৎসব
দোল পূর্ণিমা হিন্দু ধর্মের জন্যে খুব শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মতিথি পালিত হয় হিন্দু বঙ্গ সমাজে। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলারর নবদ্বীপ, মায়াপুর, কৃষ্ণনগরে এই তিথি উপলক্ষে বিশেষ উৎসব হয়। শুধু তাই নয় বাংলার বাইরে ওড়িশাতেও ধুমধাম করে পালিত হয় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মতিথি। এছাড়া অসম সহ বাংলাদেশেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই দিনে রঙের উৎসবে মেতে ওঠেন।
এদিন রাধা-কৃষ্ণের পুজো করা হয় বিশেষত। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, দোল পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীনীদের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। আবার শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত উৎসব চালু করেছিলেন। তাই রঙিন এই উৎসবের দিকে মুখিয়ে থাকেন অনেকেই।
দোল উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত মথুরা ও রাধার জন্মস্থান বৃন্দাবনে প্রায় ১৬ দিন ধরে বিশেষ উৎসব পালিত হয়।
হোলি উৎসব
অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণ ও প্রহ্লাদকে ঘিরেই হোলি উৎসব পালিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, শ্রীকৃষ্ণ ও প্রহ্লাদ দু'জনেই বিষ্ণুর অংশবিশেষ। প্রহ্লাদ ছিল রাজা হিরণ্যকশিপুরের ছেলে। সে ছিল একজন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। এই প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা। সেই উদ্দেশে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দেন সে। হোলিকা ভেবেছিলেন, তিনি তাঁর মায়াবী ক্ষমতাবলে বেঁচে যাবেন এবং পুড়ে ছাই হয়ে যাবে প্রহ্লাদ। কিন্তু আসলে হয়েছে তার উল্টোটাই। বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের গায়ে এতটুকু আঁচ লাগেনি এবং আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় কাশ্যপ কন্যার। প্রহ্লাদকে বাঁচাতে বিষ্ণুর হোলিকা বধকে উদযাপন করা হয় এভাবেই।
হোলির আগের দিন কোনও খোলা মাঠ বা স্থানে কাঠ ও জ্বালানি মজুদ করে সাজানো হয়। তার উপর একটি একটি পুত্তলি রাখা হয়, যা হোলিকার প্রতীকী রূপ। অনেকে এই সময়ে নিজেদের বাড়ি রঙ করেন ও সাজান। সেই সঙ্গে বিভিন্ন খাবার, বিশেষত গুজিয়া, মালপোয়ার মতো মিষ্টির ব্যবস্থা করা হয়। মনে করা হয় সমস্ত নেতিবাচক শক্তি এই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
হোলিকা দহন
হিন্দু ধর্মে হোলিকা দহন (Holika Dahan) খুব পরিচিত একটি রীতি। হোলির ঠিক আট দিন আগে কোনও শুভ কাজ করা উচিত না। সেই সময়কালকে হোলিকা দহন বলা হয়।
তবে এই রীতি মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ভারত,নেপাল কিংবা পশ্চিম বাংলার বাইরে প্রচলিত। বাঙালিদের অনেকটা একই ধরণের উৎসব পালনের রীতি আছে যাকে ন্যাড়া পোড়ানো বলে। দোলের আগের দিন ন্যাড়া পোড়ানো হয়।
আরও পড়ুন: দেদার ভাঙে গাছের ডাল, বসন্ত উৎসব কি পলাশ ধ্বংসের উৎসবে পরিণত হচ্ছে?
দোল ও হোলির তারিখ
এই বছর দোলযাত্রা পড়েছে ২৮ মার্চ (বাংলায় ১৩ চৈত্র)। এই দিনটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। হোলি সাধারণত দোলের পরের দিন পালিত হয়। এই বিশেষ দিনটি পড়েছে ২৯ মার্চ (বাংলায় ১৫ চৈত্র)।
দোল পূর্ণিমার সময়
আগামী ২৭ মার্চ রাত ২.৪৩.৩৬ থেকে ২৮ মার্চ রাত ১২.৫৪.৪২ পর্যন্ত এই বছর পূর্ণিমা থাকবে।
'হোলি কা দহন' কখন?
হোলি কা দহন উৎসব হয় গোটা উত্তর ভারত জুড়ে। মনের কালিমাকে দূরে সরিয়ে আলোর উজ্জ্বলতায় জীবনকে ভরিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতির জন্যে বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়। এই তিথি শুরু হচ্ছে, ২৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬.৩৭ মিনিটে এবং শেষ হচ্ছে ৮.৫৬মিনিটে।