বাঙালির বারোমাসে তেরো পার্বন। প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরই কিছু না কিছু উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকে। কোনও পুজো বা ব্রতকেই হিন্দুরা কম গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। সব কিছুরই রয়েছে আলাদা আলাদা গুরুত্ব। রাত পোহালেই অগ্রহায়ণ মাসের রবিবার। অনেকের ঘরেই পালিত হবে ইতুপুজোর ব্রত। ব্রতীরা এই নিয়ম পালন করলে সংসারে দুঃখ কষ্ট থাকে না।
ইতুপুজোর নিয়ম
লোকবিশ্বাস, সূর্যের আশীর্বাদে নারী সন্তানবতী হন। অগ্রহায়ণ মাসে প্রতি রবিবার পুজো করা হয় বলে একে সূর্যের পুজো বলা হয়। তবে সূর্য উপাসনা বলা হলেও ইতুকে মাতৃকাদেবী রূপেও গণ্য করা হয়। সূর্যকে প্রসন্ন করতে না পারলে নারী জননী হতে পারবেন না, এই বিশ্বাসে সূর্যকে প্রসন্ন করার লক্ষ্যে এই ইতুপুজো। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার ব্রাহ্মণ দিয়ে নৈবেদ্য সহযোগে পুজো করাতে হয় এবং ইতুর ব্রত কথা শুনতে হয়। পুরো অগ্রহায়ণ মাস ধরে পুজোর পর অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে পুকুর বা নদীতে ইতুর বিসর্জন দিতে হয়।
কী খাবেন আর কী খাবেন না
যারা ব্রতপালন করেন, তাঁরা এদিন আমিষ খাবার একদম গ্রহণ করবেন না। নিরামিষ আহার গ্রহণ করুন। সারাদিনে একবার অন্নগ্রহণ করতেই পারেন। তেল, হলুদ ছাড়া খাবার খাবেন। মুড়ি খেলে শুকনো মুড়ি খান কিছু দিয়ে মেখে না। প্রতি রবিবারে মেয়েরা ইতুর ঘট এনে পুজো করেন। ইতু পুজোয় লাগে চাল-কলাইয়ের নৈবেদ্য। তবে ইতু সংক্রান্তির দিনে ইতুলক্ষ্মীর নৈবেদ্যে সাধারণত সরুচাকলির পদ থাকে। পুজোর ফুল বলতে সরষে ফুল লাগে। পুজোর পর ইতুকে নদীতে বা পুকুরে বা কোনও জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়ার রীতি।
কবে থেকে শুরু হয়েছে ইতুপুজো
কার্তিক সংক্রান্তিতে (মাসের শেষ দিন) এই ব্রত শুরু হয়। পুরো অগ্রহায়ণ মাস ধরে এই ব্রত পালন করা হয়। অগ্রহায়ণের সংক্রান্তির দিন এই ব্রত শেষ হয় ইতু বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে এ বছর ইতুপুজো শুরু হয়েছে ৩০ কার্তিক, শনিবার বা ১৬ নভেম্বর। এই ব্রত শেষ হবে ২৯ অগ্রহায়ণ, রবিবার৷ ইংরেজিতে ১৫ ডিসেম্বর। একটি মাটির ঘটে মাটি ভরে কচু, কলমি লতা, আখ, শুষনি, ধান, পাঁচ কলাই প্রভৃতি (পারিবারিক প্রথা অনুসারে গাছ এবং রীতি পাল্টে যায়) গাছ এবং বীজ বপন করে ইতু বানিয়ে তাকে পুজো করা হয়। প্রতিদিন শুদ্ধ বস্ত্রে শুদ্ধ মনে ইতুকে জল দান করা এই পুজোর রীতি। নে করা হয় নিষ্ঠা ভরে ইতু পুজো পালন করলে সংসারে অর্থ, সুখ সমৃদ্ধি, শ্রী ভরে থাকে৷ কোনওদিন ফসল বা অন্নের অভাব হয় না।