scorecardresearch
 

Kaushiki Amavasya- Bamakhyapa in Tarapith: কৌশিকী অমাবস্যাতেই মা তারার আবির্ভাব পান ধ্যানমগ্ন বামাখ্যাপা! জানুন পৌরাণিক কাহিনি

Kaushiki Amavasya- Bamakhyapa in Tarapith: কৌশিকী অমাবস্যার পবিত্র লগ্নে তারাপীঠ মন্দিরে, বিশেষ উপাচারে পুজো করা হয় তারা মায়ের৷ তবে শুধু তারাপীঠ না, অন্যান্য একাধিক সতীপীঠ সহ কালী মন্দিরে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয় এই শুভ তিথিতে। 

Advertisement
কৌশিকী অমাবস্যাতেই মা তারার আবির্ভাব পান ধ্যানমগ্ন বামাখ্যাপা কৌশিকী অমাবস্যাতেই মা তারার আবির্ভাব পান ধ্যানমগ্ন বামাখ্যাপা

হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন তিথিতে  মা কালীর (Goddess Kali) বিভিন্ন রূপের পুজো করা হয়। দেবীর আরাধনা সর্বজনবিদিত। ভাদ্র মাসের শুরুর অমাবস্যাই, 'কৌশিকী অমাবস্যা' নামে পরিচিত। এই পুজোর সঙ্গে জড়িত আছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। কৌশিকী অমাবস্যার পবিত্র লগ্নে তারাপীঠ মন্দিরে, বিশেষ উপাচারে পুজো করা হয় তারা মায়ের৷ তবে শুধু তারাপীঠ না, অন্যান্য একাধিক সতীপীঠ সহ কালী মন্দিরে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয় এই শুভ তিথিতে। 

কৌশিকী অমাবস্যা ২০২২-র দিনক্ষণ (Kaushiki Amavasya 2022 Date & Time)

২৭ অগাস্ট (১০ ভাদ্র) শনিবার ঘ ১/২৩/৩১ থেকে ২৮ অগাস্ট (১১ ভাদ্র), রবিবার ২/২০/৩০ পর্যন্ত থাকবে অমাবস্যা।   

কৌশিকী অমাবস্যার মাহাত্ম্য (Kaushiki Amavasya SIgnificance) 

কথিত আছে সাধক বামাক্ষ্যাপা, ১২৭৪ বঙ্গাব্দে কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ধ্যানমগ্ন বামাক্ষ্য়াপা এদিন তারা মায়ের আবির্ভাব পান। এছাড়াও শোনা যায়, এই তিথিতে কৌশিকী রূপে মা তারা বিশেষ সন্ধিক্ষণে, শুম্ভ- নিশুম্ভ নামক অসুরদের দমন করেছিলেন। সেই নাম থেকেই 'কৌশিকী অমাবস্যা' নামটি এসেছে। 

Sadhak Bamakhyapa

কে ছিলেন বামাখ্যাপা? (Who is Bamakhyapa)

বামাখ্যাপার জন্ম বীরভূম জেলায়। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সমসাময়িক। হিন্দু তান্ত্রিক বামাখ্যাপা, মা তারার ভক্ত ছিলেন। মা তারাকে তিনি  'বড় মা' বলে ডাকতেন। তারাপীঠেই দ্বারকা নদের তীরে যোগ ও তন্ত্রসাধনা করতেন তিনি। ভক্তরা বিশ্বাস করত যে, তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা আছে। বামাখ্যাপা মন্দিরের নিয়মকানুন মানতেন না। এমনকি দেবতার থালা থেকেই নৈবেদ্য তুলে খেতেন। 

কথিত আছে, নাটোরের মহারানীকে স্বপ্নে দেবী তারার প্রত্যাদেশ পান যে, দেবীপুত্র বলে বামাখ্যাপাকে যেন আগে খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে মন্দিরে পুজোর আগেই বামাখ্যাপাকে নৈবেদ্য প্রদান এবং তাঁকে অবাধে মন্দিরে বিচরণ করতে দেওয়া হত। আরও শোনা যায়, মা তারা ভয়ংকর বেশে বামাখ্যাপাকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং পরে মাতৃবেশে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। তারাপীঠ শ্মশানে ও দুমকা জেলার মালুটি গ্রামের বামাখ্যাপার স্মৃতিমন্দির আছে। 

Advertisement

কৌশিকী অমাবস্যা নিয়ে বিশ্বাস (Kaushiki Amavasya Popular Beliefs)

কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ শ্মশানে চলে তন্ত্রমন্ত্রের বিশেষ যোগ্য। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে, এই রাতকে 'তারা রাত্রি'ও বলা হয়। এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধিলাভ করেন। বিশ্বাস অনুযায়ী, কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে বিশেষ পুজোয় অংশগ্রহণ করে দ্বারকা নদীতে স্নান করলে জীবনের সব পাপ থেকে মুক্তি মেলে। এদিন সঠিক উপায়ে তন্ত্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে, জীবনের সমস্ত বাঁধা বিপত্তি কেটে যায়, সহজে। 

 

Sadhak Bamakhyapa tarapith


কৌশিকী অমাবস্যার পৌরাণিক ইতিহাস (Mythological Stories of Kaushiki Amavasya) 

মা তারা হলেন দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা। কৌশিকী তারই আরেক রূপ। মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে, এক সময় মহিষাসুরের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ট ছিলেন। তখনই দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন৷ কিন্তু এই শান্তি বেশিদিন থাকে না। শুম্ভ- নিশুম্ভের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এরপর সকলে পার্বতীর স্মরণাপন্ন হলে,  দেবতাদের রক্ষা করতে মা মহামায়া তাঁর ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করে, এক দেবীমূর্তির জন্ম দেন৷ 

 

Sadhak Bamakhyapa


এবছর তারাপীঠে পুজোর জাকজমক (Kaushiki Amavasya Puja in Tarapith)

কোভিডের জন্য গত দু'বছর তারাপীঠে ভক্তদের সমাগম হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। তাই জাকজমকপূর্ণভাবে কৌশিকী অমাবস্যার পুজোর আয়োজন হয়েছে তারাপীঠে। বেশ কিছুদিন আগে থেকে চলছে প্রস্তুতি। সকলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বীরভূম প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যবস্থা। ওয়াচ টাওয়ার থেকে চলছে পর্যবেক্ষণ। এছাড়াও শতাধিক  সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে রাস্তার মোড়ে মোড়ে  ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ । বড় পর্দার মাধ্যমে ভক্তদের আরতি দেখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তারা মায়ের বিশেষ পুজো (Tara Maa Puja in Kaushiki Amavasya)

কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা। এদিন মঙ্গলারতি দিয়ে দিন শুরু হয় এবং দিনভর চলে বিশেষ পুজোপাঠ। মঙ্গলারতির পর মাকে নিবেদন করা হয় শীতল ভোগ। যেখানে থাকে ফল, মিষ্টি, ক্ষীর ইত্যাদি। এই বিশেষ দিনে মায়ের শিলামূর্তিকে স্নান করানোর পর, পরানো হয় রাজবেশ। ফুলের সাজে সাজানো হয় মা তারাকে। এই বিশেষ দিনে ভোগেরও ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু আচার। দুপুরে মায়ের মধ্যাহ্ন ভোগে থাকে পোলাও, সাত রকম ভাজা, ভাত, মাছ সহ আরও নানা পদ। তবে তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য শোল মাছ পোড়া। রাতে মন্দির চত্বরেই হয় মহাযজ্ঞ ও নিশিপুজোর আয়োজন। শুধুমাত্র মন্দিরের সেবায়েতরা এই মহাযজ্ঞে অংশ নেন। 
 

Advertisement