
হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন তিথিতে মা কালীর (Goddess Kali) বিভিন্ন রূপের পুজো করা হয়। দেবীর আরাধনা সর্বজনবিদিত। ভাদ্র মাসের শুরুর অমাবস্যাই, 'কৌশিকী অমাবস্যা' (Kaushiki Amavasya) নামে পরিচিত। এই পুজোর সঙ্গে জড়িত আছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। কৌশিকী অমাবস্যার পবিত্র লগ্নে তারাপীঠ মন্দিরে (Tarapith Mandir), বিশেষ উপাচারে পুজো করা হয় তারা মায়ের (Tara Maa)৷ তবে শুধু তারাপীঠ না, অন্যান্য একাধিক সতীপীঠ (Sati Peeth) সহ কালী মন্দিরে (Kali Mandir) বিশেষ পুজোর আয়োজন হয় এই শুভ তিথিতে।
কৌশিকী অমাবস্যা ২০২২-র দিনক্ষণ (Kaushiki Amavasya 2022 Date & Time)
২৭ অগাস্ট (১০ ভাদ্র) শনিবার ঘ ১/২৩/৩১ থেকে ২৮ অগাস্ট (১১ ভাদ্র), রবিবার ২/২০/৩০ পর্যন্ত থাকবে অমাবস্যা।
এবছর তারাপীঠে পুজোর জাকজমক (Kaushiki Amavasya 2022 Puja at Tarapith Temple)
কোভিডের জন্য গত দু'বছর তারাপীঠে ভক্তদের সমাগম হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। তাই জাকজমকপূর্ণভাবে কৌশিকী অমাবস্যার পুজোর আয়োজন হয়েছে তারাপীঠে। বেশ কিছুদিন আগে থেকে চলছে প্রস্তুতি। সকলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বীরভূম প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যবস্থা। ওয়াচ টাওয়ার থেকে চলছে পর্যবেক্ষণ। এছাড়াও শতাধিক সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ । বড় পর্দার মাধ্যমে ভক্তদের আরতি দেখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তারা মায়ের বিশেষ পুজো (Kaushiki Amavasya 2022 -MaaTara Puja & Bhog in Tarapith)
কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা। এদিন মঙ্গলারতি দিয়ে দিন শুরু হয় এবং দিনভর চলে বিশেষ পুজোপাঠ। মঙ্গলারতির পর মাকে নিবেদন করা হয় শীতল ভোগ। যেখানে থাকে ফল, মিষ্টি, ক্ষীর ইত্যাদি। এই বিশেষ দিনে মায়ের শিলামূর্তিকে স্নান করানোর পর, পরানো হয় রাজবেশ। ফুলের সাজে সাজানো হয় মা তারাকে।
আরও পড়ুন: আগামী ৬ মাস প্রিয় রাশিতে অধিষ্ঠিত থাকবে শনি! আয় বৃদ্ধির প্রবল সম্ভাবনা কাদের?
দুপুরে মায়ের মধ্যাহ্ন ভোগে থাকে পোলাও, সাত রকম ভাজা, ভাত, মাছ সহ আরও নানা পদ। তবে তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য শোল মাছ পোড়া। রাতে মন্দির চত্বরেই হয় মহাযজ্ঞ ও নিশিপুজোর আয়োজন। শুধুমাত্র মন্দিরের সেবায়েতরা এই মহাযজ্ঞে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: অঞ্জলি থেকে দেবীর বিসর্জনের সময়! জানুন পঞ্জিকা মতে দুর্গাপুজোর সম্পূর্ণ নির্ঘণ্ট
কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ শ্মশানে চলে তন্ত্রমন্ত্রের বিশেষ যোগ্য। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে, এই রাতকে 'তারা রাত্রি'ও বলা হয়। এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধিলাভ করেন।
কৌশিকী অমাবস্যার মাহাত্ম্য (Kaushiki Amavasya's Significance)
কথিত আছে সাধক বামাক্ষ্যাপা, ১২৭৪ বঙ্গাব্দে কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ধ্যানমগ্ন বামাক্ষ্য়াপা এদিন তারা মায়ের আবির্ভাব পান। এছাড়াও শোনা যায়, এই তিথিতে কৌশিকী রূপে মা তারা বিশেষ সন্ধিক্ষণে, শুম্ভ- নিশুম্ভ নামক অসুরদের দমন করেছিলেন। সেই নাম থেকেই 'কৌশিকী অমাবস্যা' নামটি এসেছে।
কৌশিকী অমাবস্যার পৌরাণিক ইতিহাস (Kaushiki Amavasya Mythological Stories)
মা তারা হলেন দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা। কৌশিকী তারই আরেক রূপ। মার্কণ্ডেয় পুরাণ মতে, এক সময় মহিষাসুরের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ট ছিলেন। তখনই দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন৷ কিন্তু এই শান্তি বেশিদিন থাকে না। শুম্ভ- নিশুম্ভের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এরপর সকলে পার্বতীর স্মরণাপন্ন হলে, দেবতাদের রক্ষা করতে মা মহামায়া তাঁর ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করে, এক দেবীমূর্তির জন্ম দেন৷
আরও পড়ুন: কেতুর প্রভাবে ৩ রাশির জীবনে তৈরি ধন রাজযোগ! সুসময়ের ইঙ্গিত...
দেবী কৌশিকী অযোনিসম্ভবা ছিলেন, সেই কারণে কৌশিকী দেবীই শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে দেবী কৌশিকীর শরীর থেকে হাজারও যোদ্ধৃ মাতৃকাকুল সৃষ্ট হয় এবং তারাই সমগ্র অসুরকুলকে বিনাশ করে। এই ঘটনাটি ভাদ্র অমাবস্যায় ঘটে। তাই পরবর্তীকালে এটি কৌশিকী অমাবস্যা নামে পরিচিত হয়।
কৌশিকী অমাবস্যা নিয়ে বিশ্বাস (Beliefs on Kaushiki Amavasya)
বিশ্বাস অনুযায়ী, কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে বিশেষ পুজোয় অংশগ্রহণ করে দ্বারকা নদীতে স্নান করলে জীবনের সব পাপ থেকে মুক্তি মেলে। এদিন সঠিক উপায়ে তন্ত্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে, জীবনের সমস্ত বাঁধা বিপত্তি কেটে যায়, সহজে।