scorecardresearch
 

Kojagari Laxmi Puja: পুরোহিত ছাড়াই স্ত্রী আচারে করুন লক্ষ্মীপুজো, সন্তুষ্ট হবেন দেবী

অনেকেই জানেন না, এই পুজো সম্পূর্ণ স্ত্রী আচারের পুজো। এতে কোনও পুরুষ পুরোহিত ছাড়াই এ পুজো গৃহস্থ বাড়িতে করা সম্ভব এবং বাংলায় এ ভাবেই হয়ে এসেছে। আগে শুধুমাত্র বড় জমিদার বাড়িতে এবং বর্ধিষ্ণু গৃহস্থের বাড়িতেই পুরোহিত ডেকে যজমান পুজো করাতেন। কিন্তু আদপে এই পুজোতে তেমন কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। পুরোহিতের এই বিষয়টি সাম্প্রতিক। বিগত পাঁচ দশকে এর চল বেড়েছে।

Advertisement
পুরোহিত ছাড়াই স্ত্রী আচারে করুন লক্ষ্মীপুজো, সন্তুষ্ট হবেন দেবী পুরোহিত ছাড়াই স্ত্রী আচারে করুন লক্ষ্মীপুজো, সন্তুষ্ট হবেন দেবী
হাইলাইটস
  • যেমন তেমন ভাবে পুজো করলে হবে না। জানতে হবে সম্পূর্ণ আচার এবং নিয়ম।
  • অনেকেই সংস্কৃত মন্ত্র জানেন না। তাতেও এ পুজোর বিধিতে কোনও কুপ্রভাব পড়ে না।
  • প্রয়োজন শুদ্ধ মন এবং ভক্তির। ভক্তের কাছ থেকে বেশি কিছু লক্ষ্মী দেবী আশা করেন না।

আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বাংলার প্রায় প্রতি ঘরে ধনদেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। একেই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো বলা হয়। শতাব্দী প্রাচীন এই রীতি বঙ্গদেশে প্রচলতি রয়েছে। তবে অনেকেই জানেন না, এই পুজো সম্পূর্ণ স্ত্রী আচারের পুজো। এতে কোনও পুরুষ পুরোহিত ছাড়াই এ পুজো গৃহস্থ বাড়িতে করা সম্ভব এবং বাংলায় এ ভাবেই হয়ে এসেছে। আগে শুধুমাত্র বড় জমিদার বাড়িতে এবং বর্ধিষ্ণু গৃহস্থের বাড়িতেই পুরোহিত ডেকে যজমান পুজো করাতেন। কিন্তু আদপে এই পুজোতে তেমন কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। পুরোহিতের এই বিষয়টি সাম্প্রতিক। বিগত পাঁচ দশকে এর চল বেড়েছে।

তবে যেমন তেমন ভাবে পুজো করলে হবে না। জানতে হবে সম্পূর্ণ আচার এবং নিয়ম। অনেকেই সংস্কৃত মন্ত্র জানেন না। তাতেও এ পুজোর বিধিতে কোনও কুপ্রভাব পড়ে না। প্রয়োজন শুদ্ধ মন এবং ভক্তির। ভক্তের কাছ থেকে বেশি কিছু লক্ষ্মী দেবী আশা করেন না। তা হলে দেখে নিন, কী ভাবে স্ত্রী আচারে শুদ্ধ মতে লক্ষ্মীপুজো বাড়িতে করবেন।


লক্ষ্মী পূজোর প্রণালী:


১) প্রথমে মাথায় একটু গঙ্গাজল নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে নিন। পূজার আগে মাথায় জল নিয়ে দেহ ও নারায়ণকে স্মরণ করে মন শুদ্ধ করে নেবেন। তারপর সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন। যে কোনও পূজার আগে আমাদের প্রাণশক্তির উত্‍স সূর্যকে জল দেওয়ার নিয়ম; কারণ, তিনিই সকল প্রাণশক্তির উত্‍স। এমনকী, সূর্যালোক ছাড়া শস্যও উত্‍পন্ন হবে না তাই জল দেওয়ার জন্য ঠাকুরের সিংহাসনে একটি ছোটো তামার পাত্র সর্বদা রাখবেন। সূর্যের নাম করে সেই কুশীতে জল নিয়ে সেই তামার পাত্রে দেবেন। তারপর সংসারের সকলের মঙ্গলকামনা করবেন।


২) এরপর একটু গঙ্গাজল আপনার পূজার আসন, পূজার ফুল- নৈবেদ্য ইত্যাদি উপকরণের উপর ছিটিয়ে দেবেন। এইভাবে পূজাদ্রব্যগুলিকে শুদ্ধ করে নিতে হয়। এরপর লক্ষ্মীর সামনে সামান্য ধান ও এক চিমটি মাটি ছড়িয়ে দিয়ে তার উপর জলভরা ঘট স্থাপন করবেন। ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গলচিহ্ন বা স্বস্তিকাচিহ্ন এঁকে নিতে ভুলবেন না। ঘটে একটি আমপল্লব (যাতে বিজোড় সংখ্যায় আমপল্লব থাকে) ও তার উপর একটি কলা বা হরিতকি দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন। ইচ্ছা করলে ঘটে ও লক্ষ্মীকে একটি করে মালাও পরাতে পারেন।

Advertisement


৩)  এবার লক্ষ্মীকে ধ্যান করবেন। লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র হল:

ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-শৃণিভির্যাম্য-সৌম্যয়োঃ
পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্
গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার-ভূষিতাম্
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু

অর্থাৎ দক্ষিণহস্তে পাশ, অক্ষমালা এবং বামহস্তে পদ্ম ও অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনে উপবিষ্টা, শ্রীরূপা, ত্রিলোকমাতা, গৌরবর্ণা, সুন্দরী, সর্বালঙ্কারভূষিতা ব্যগ্রহস্তে স্বর্ণপদ্মধারিণী এবং দক্ষিণহস্তে বরদাত্রী দেবী লক্ষ্মীর ধ্যান করি।


৪)  এরপর মা লক্ষ্মীকে আপনার ঘরে আবাহন করবেন।

আবাহন মন্ত্রটি হল —

ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ

ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি

ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান গৃহাণ।

সংস্কৃতে মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বাংলায় বলবেন, এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী, যতক্ষণ তোমার পূজা করি, ততক্ষণ তুমি আমার গৃহে স্থির হয়ে থাকো মা। তারপর ভাববেন, মা লক্ষ্মী আপনার হৃদয়ে এসে বসে আপনার দেওয়া ফুল-নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন। একে বলে মানসপূজা।


৫)  এরপর আপনার পূজাদ্রব্যগুলি একে একে মা লক্ষ্মীকে দেবেন। লক্ষ্মী আপনার গৃহে পূজা নিতে এলেন, তাই প্রথমেই একটুখানি জল ঘটের পাশে লক্ষ্মীপদচিহ্নে দেবেন। এটি মা লক্ষ্মীর পা ধোয়ার জল।

এরপর দুর্বা ও একটু আতপ চাল ঘটে দেবেন। এটি হল অর্ঘ্য। এর সঙ্গে একটি ফুলও দিতে পারেন।

এরপর লক্ষ্মীকে একটি চন্দনের ফোঁটা দেবেন। লক্ষ্মীর প্রতিমা না থাকলে ফুলে চন্দন মাখিয়ে ঘটে দেবেন।

এরপর মা লক্ষ্মীকে ফুল দেবেন। তারপর প্রথমে ধূপ ও তারপর প্রদীপ দেখাবেন। শেষে নৈবেদ্যগুলি নিবেদন করবেন।


৬) এর পর দেবেন পুষ্পাঞ্জলী।

নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ
এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি ওম শ্রী শ্রী লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ

পুষ্পাঞ্জলি এক, তিন বা পাঁচ বার দিতে পারেন। পুষ্পাঞ্জলির পর নারায়ণের উদ্দেশ্যে একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা ঘটে দেবেন। তারপর ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুলও ঘটে দেবেন। মা লক্ষ্মীর বাহন পেচককেও একটি ফুল দেবেন।

আপনি যদি দীক্ষিত হন, তবে এরপর আপনার গুরুমন্ত্র জপ করে মা লক্ষ্মীর বাঁ হাতের উদ্দেশ্যে জপসমর্পণ করবেন।


৭) এর প্রণাম করে পূজা সমাপন করবেন। 

ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে
সর্বতঃ পাহি মাং নিত্যং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে

মন্ত্র পড়তে অক্ষম হলে বিনা মন্ত্রেই ভক্তিভরে মা-কে প্রণাম করবেন। এরপর ব্রতকথা পাঠ করবেন বা শুনবেন। এরপর বাড়িতে যে লক্ষ্মীর পাঁচালি আছে তা পাঠ করবেন।


৮)  পুজোর সময় এই বিষয়গুলি অবশ্যই খেয়াল রাখুন:

লক্ষ্মীপূজায় কাঁসর-ঘণ্টা বাজাতে নেই! উচ্চকিত শব্দে বিরক্ত হন দেবী।

দিতে নেই তুলসীপাতাও।

ব্যবহার করতে নেই স্টিল বা লোহার কোনও বাসন। কেন না, লোহা দেওয়া হয় অলক্ষ্মীকে। তাই লোহা দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে ভক্তের গৃহ ত্যাগ করেন লক্ষ্মী।

Advertisement

 

ভক্তের কাছ থেকে ভক্তি ছাড়া আর কিছুই চান না মা লক্ষ্মী। তাই একমাত্র তাঁর পূজাই মন্ত্র ছাড়া, শুধু তাঁকে স্মরণ করেই করা সম্ভব। সেই আচারের কথা মাথায় রেখেই প্রাচীন কাল থেকে গৃহস্থ বাড়ির মহিলারা ভক্তিভরে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করে আসছেন। যিনি কোনও রকম মন্ত্র জানেন না, বা বিশুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণ করতে পারেন না, তিনিও এই পূজা করতে পারেন। কারণ অশুদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণে দেবী রুষ্ট হন। তাই ভুল উচ্চারণের চেয়ে উচ্চারণ না করা অনেক ভালো।

 

Advertisement