১৮ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রি। ওই দিন শিবের আরাধনা করেন ভক্তরা। শিবকে সন্তুষ্ট করলে জীবনের সমস্ত ইচ্ছাপূরণ হয় বলে লোকবিশ্বাস। বেলপাতা মাহাদেবের অত্যন্ত প্রিয়। সে কারণে অভিষেক করে শিবলিঙ্গে বিল্বপত্র অর্পণ করা হয়। সদগুরুর কথায়, 'শিবের প্রিয় অর্থাৎ বেল পাতা সেই তত্ত্ব যাকে আমরা শিব বলি।'
শুধু বেলপাতাই নয়, শিবের কাছে অর্পণ করা সব জিনিসই শুভ। সেগুলি ব্রহ্মের সঙ্গে যোগাযোগে উত্তম মাধ্যম। অনেক ভক্তই শিবকে বেলপাতা নিবেদন করার পর থালায় তা নিয়ে নেন। পুজোর পর পাতা ফেলে রাখেন না। বরং তা থেকে কয়েকটি নিয়ে নেন। লোকবিশ্বাস, বাবার পায়ে ঠেকানো বেলপাতা শিবের পায়ে ঠেকানো বেল পাতার শুভ গুণ দীর্ঘক্ষণ থাকে বলে বিশ্বাস। বেল পাতা শার্টের পকেটে রেখে ঘুরতে পারেন। শীঘ্রই জীবনে ফারাক দেখতে পাবেন। স্বাস্থ্য এবং মানসিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন অনুভব করবেন। সেই সঙ্গে জীবনে আসবে সুখ ও সমৃদ্ধি।
সদগুরু বলেছেন, বনে হাজার হাজার প্রজাতির গাছ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গাছ আছে। গাছ এবং পাতার এই বৈচিত্র্যের মধ্যে, আধ্যাত্মিক পথে কেবল একটি পাতা বেছে নেওয়া হল কেন? আসলে বেল পাতা সবার থেকে আলাদা। এই পাতাকে নজর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
১। দুধ- মহাশিবরাত্রিতে দুধ দিয়ে ভোলেবাবার অভিষেক অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। ভগবান শিবের রুদ্রাভিষেক এই দিনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দুধের সঙ্গে শিবলিঙ্গের রুদ্রাভিষেক করলে সকল ইচ্ছা পূরণ হয়। এর পাশাপাশি এই দিনে দুধ দান করাও খুব শুভ বলে মনে করা হয়।
২। জল- ওম নমঃ শিবায়ঃ জপ করে শিবলিঙ্গে জল নিবেদন করলে মন শান্ত থাকে। সমুদ্র মন্থনের সময় বিষের প্রভাব কমাতে দেবতারা মহাদেবের গায়ে জল ঢেলেছিলেন। সেই থেকে তিনি নীলকান্ত নামে খ্যাত।
৩। বিল্বপত্র-বেল পাতা হল ঈশ্বরের ত্রিনয়নের প্রতীক। তাই তিনটি পাতা বিশিষ্ট বিল্বপত্র শিবের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। আশুতোষের পুজোয় অভিষেক ও বিল্বপত্রের স্থান প্রথম। ঋষিরা বলেছেন, ভোলেকে বিল্বপত্র নিবেদন আর এক কোটি কন্যাদানের সমান পুণ্য।
৪। জাফরান- লাল জাফরান দিয়ে শিবলিঙ্গে তিলক করলে জীবনে আসে ইতিবাচক শক্তি। মাঙ্গলিক দোষের অবসান হয়। কথিত আছে, মহাশিবরাত্রির দিনে জাফরানের তিলক করলে সমস্ত বাধা দূর হয়।
৫। সুগন্ধি-শিবলিঙ্গে সুগন্ধি ছেটানো শুভ বলে মনে করা হয়। সুগন্ধি দিলে মন পবিত্র হয়। কুপ্রবৃত্তি থেকে মুক্তি মেলে। শিবলিঙ্গে সুগন্ধি দিলে ভক্তরা জ্ঞানলাভ করে। সত্যের পথ থেকে কখনও বিচ্যুত হয় না।
৬। দই- শিবকে দই অর্পণ করলে একজন ব্যক্তি পরিণত হন। জীবনে স্থিতিশীলতা আসে। ভোলেবাবাকে দই নিবেদন করা হলে জীবনের সমস্ত বাধা এবং অসুবিধা দূর হয়।
৭। ঘি- দেশি ঘি শক্তির প্রতীক। তাই শিবলিঙ্গে ঘি দিয়ে অভিষেক করলে মানুষ শক্তিশালী হন। সন্তান লাভের জন্য শিবকে ঘি নিবেদন করুন।
৮। চন্দন- মহাকালকে চন্দন দিলে সেই ব্যক্তি আকর্ষণীয় চেহারা পান। জীবনে সম্মান ও খ্যাতির কোনও অভাব হয় না।
৯। মধু- মধু মানে মিষ্টি। লোকবিশ্বাস, ভোলেবাবা কখনও কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন না। শিবের উদ্দেশে মধু অর্পণ করলে কথায় মাধুর্য থাকে। হৃদয়ে থাকে দানের অনুভূতি।
১০। ভাঙ- শিব এবং ভাঙের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কথিত আছে,বিষের প্রভাব কমাতে সমুদ্র মন্থনের সময়ও ভাঙ ব্যবহার করা হয়েছিল। পুরাণে ভাঙাকে ঐশ্বরিক ওষুধ হিসেবে দেখা হয়েছে। যার দ্বারা চর্মরোগের চিকিৎসা সম্ভব। শিবরাত্রিকে মহাদেবকে ভাঙ নিবেদন করুন।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রি উৎসব উদযাপিত হয়। শিবলিঙ্গে এই শুভ জিনিসগুলি অর্পণের পরে,ওম নমঃ শিবায় এবং মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করুন।
আরও পড়ুন- ঝাঁটা, ছুরি, কাঁচি- ভুল ব্যবহারে রুষ্ট হন লক্ষ্মী, কাঙাল হয়ে যাবেন