বিভিন্ন তিথিতে বিভিন্ন রূপে পুজিত হন দেবী কালী। হিন্দু ধর্মে মা কালীর আরাধনা সর্বজনবিদিত। মাঘ মাসের চতুর্দশী অমাবস্যায় হয় রটন্তী কালী পুজো (Ratanti Kali Puja)। এই তিথিতে নিষ্টা করে কালী মায়ের আরাধনা করলে,ভক্তের ডাকে সাড়া দেন তিনি। এবছর ৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার পড়েছে রটন্তী কালী পুজো।
সারা বছরের প্রতিটি অমাবস্যায় বিভিন্ন কালীপুজো হলেও, একমাত্র এই রটন্তী কালী পুজো হয় চতুর্দশী তিথিতে। সমস্ত মন্দির ও অনেক বাড়িতেও তাই এদিন আয়োজন করা হয় বিশেষ পুজোর। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে সারা বছরে তিনটে কালী পুজো খুব বড় করে পালন করা হয়। যার মধ্যে একটি -মাঘ মাসে রটন্তী কালী পুজো। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে রটন্তী কালী পুজো খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়। মন্দিরে যেমন পুজো হয়, তেমন দক্ষিণেশ্বর গঙ্গার ঘাটে বহু পুণ্যার্থী এদিন স্নান করতে আসেন।
রটন্তী কালী পুজো ২০২৪ কবে?
৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার পড়েছে এবছরের রটন্তী কালী পুজো।
চতুর্দশী তিথি
৮ ফেব্রুয়ারি ঘ ৯/২১/৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ঘ ৭/৩১/৫৫ পর্যন্ত চতুর্দশী তিথি থাকবে।
অমাবস্যা তিথি
৯ ফেব্রুয়ারি, ঘ ৭/৩১/৫৫ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৫/২৭/৪২ পর্যন্ত অমাবস্যা তিথি থাকবে।
মৌনী অমাবস্যা
এবছর ৯ ফেব্রুয়ারি পড়েছে মৌনী অমাবস্যা। আসলে মাঘ মাসের অমাবস্যা তিথিকে মৌনী অমাবস্যা বলা হয়। এদিন দান ও স্নানের খুবই মাহাত্ম্য হয়েছে। শোনা যায়, ঋষি মনু এই দিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর নাম থেকেই 'মৌনী' নামটা এসেছে। সে জন্যে এই অমাবস্যাকে মৌনী অমাবস্যা বলা হয়।
কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণদেব একবার বলেছিলেন, "রটন্তী কালী পুজোর ভোরে দেখলাম দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্বর্গ দেবতারা নেমে এসেছেন স্নান করতে।" সেই কারণে আজও বহু মানুষ দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার তীরে রটন্তীর ভোরে পুণ্যস্নান করতে আসেন। তবে শুধু দক্ষিণেশ্বর নয়, কালীঘাট সহ আরও বিভিন্ন মন্দিরের প্রতিমা এদিন সেজে ওঠেন বিশেষ সাজে।
রটন্তী কালী পুজোর মাহাত্ম্য
'রটন্তী' শব্দটি এসেছে 'রটনা' শব্দ থেকে। যার অর্থ প্রচার হওয়া। মনে করা হয়, এই বিশেষ দিনেই দেবীর মহিমা চতুর্দিকে রটে যায়। মুক্তকেশী মায়ের মহিমা এই তিথিতেই সর্বস্তরে রটিত হয়ে থাকে।
আবার লোক কথা অনুসারে শোনা যায়,এদিনই দেবী ছিন্নমস্তার আবির্ভাব হয়েছিল। দেবী পার্বতী তার সহচরীদের ক্ষিদে মেটানোর জন্যে নিজ মুণ্ডুচ্ছেদ করে ত্রিধারায় রক্তবারি প্রকট করেছিলেন।
শাস্ত্র মতে, যখন শ্রীকৃষ্ণের প্রেমলীলায় রাধা মত্ত ছিলেন, সেই সময়ে একদিন দুপুরে গোপীনিরা তার বাঁশির আওয়াজ শুনে চমকে উঠেছিলেন। গোপিনীরা বনের দিকে ছুটে গিয়ে দেখলেন সামনে ইষ্টমূর্তি। শ্রীরাধাই যে স্বয়ং আদ্যাশক্তি তা সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন তারা। সেদিন স্মরণ করেই বিশেষ তিথিতে হয় রটন্তী কালী পুজো।
বিশ্বাস অনুযায়ী, যাদের জীবনে দাম্পত্য কলহ রয়েছে, কিংবা যারা কোনও অবাঞ্ছিত কারণে দাম্পত্য সুখ পাননি বা যাদের সদ্য প্রেমে বিচ্ছেদ হয়েছে, তারা এই সময় রটন্তী কালীর আরাধনার মাধ্যমে নিশ্চিত ভাবে সফলতা লাভ করতে পারেন।