বাঙালিদের আরও এক উৎসব সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) আসতে আর বেশি দেরি নেই। বিশেষত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে এটি খুবই স্পেশাল। প্রায় সারা বছর ধরে সকলে অপেক্ষা করে থাকেন সরস্বতী পুজোর জন্যে। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে যেই নামটা খুবই পরিচিত তা হল কুল (Jujube Fruit)। ছোট্ট এই ফল এই পুজোয় বিশেষভাবে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে মূলত বাজারে কুল পাওয়া যায়।তবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে একটা প্রথা। লোকমুখে শোনা যায় সরস্বতী পূজার আগে কুল খেলে নাকি সরস্বতী ঠাকুর রেগে যান এবং পরীক্ষায় পাশ করা যায় না। তবে জানেন কি এর পেছনে রয়েছে কী কারণ? পড়ুন বিস্তারিত...
টক-মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট এই ফল কুল প্রায় সবারই খুব প্রিয়। কুলের সঙ্গে সরস্বতী পুজোর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা সকলেরই জানা। শুধু ঘরে ঘরে নয় স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠা করে হয় বাগদেবীর আরাধনা। সকাল থেকে উপোস করে অঞ্জলি দিয়ে তার পরেই প্রসাদে কুল খাওয়ার রীতি বহুদিন ধরে।
ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। বাড়ির বড়রা, ছোটদের বলেন পুজোর আগে কুল খেলে দেবী সরস্বতী খুব রেগে যান। পরীক্ষায় পাশ করা কিংবা ভালো নম্বর পাওয়া তান প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। তবে ছর কারণ অনেকেরই অজানা।
আরও পড়ুন: ১০ ফেব্রুয়ারি সবার জন্য় খুলবে বেলুড় মঠ, মানতে হবে কোভিড বিধি
* সরস্বতী পুজোর আগে কুল না খাওয়ার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রচলিত রীতি। তার মধ্যে কৃষি প্রধান রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। হিন্দু ধর্মে কোনও মরসুমের প্রথম ফলই দেবতাদের উৎসর্গ করে খাওয়ার রীতি রয়েছে। পৌষ-মাঘ এই সময়টাতে বাজারে খুব সহজে এবং ভালো বিভিন্ন রকমের কুল মেলে। আর সেই সময়ই পঞ্চমী তিথিতে হয় সরস্বতী পুজো। তাই বসন্ত পঞ্চমীতেই উৎসর্গ করে তা প্রসাদ হিসেবে খাওয়ার রীতি।
* শাস্ত্র মতে দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে ব্যাসদেব দীর্ঘদিন তপস্যা করেছিলেন। শোনা যায়, সে তপস্যার আগে দেবী সরস্বতী তাঁর তপস্যাস্থলের পাশেই একটি কুল বীজ রেখে একটি শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্তানুযায়ী বলা ছিল, যতদিন না কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছ হবে এবং সেই গাছের ফল পেকে ব্যাসদেবের মাথার উপর পড়বে। ততদিন অবধি দেবীর তপস্যা করতে হবে।তারপরেই দেবী তাঁর তপস্যায় তিনি তুষ্ঠ হবেন। সেই শর্তানুযায়ী, ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন। যেদিন গাছের নতুন ফল তাঁর মাথায় পড়ে, তিনি বুঝতে পারেন দেবী তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হয়েছেন। বিশেষ দিনটি ছিল পঞ্চমী। সেই দিন দেবীকে কুল নিবেদন করে ব্যাসদেব ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেছিলেন। সেইজন্যই শ্রীপঞ্চমীর দিনই সরস্বতী দেবীকে নিবেদন করার পর কুল খাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: কী কী নিয়ম রয়েছে কেন্দ্রের দেওয়া মহাকুম্ভের নির্দেশিকায়? দেখে নিন এক নজরে
* প্রচলিত এই লোকাচারের পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। বসন্তকালে বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দেয় চারিদিকে। সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটের সমস্যা এই সময়ে ঘরে ঘরে লেগে থাকে। আধ পাকা বা কাঁচা কুল বসন্তকালে খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এই ফল মারাত্মক টক হয় যা দাঁতের জন্যে ক্ষতিকারক। তাই এটি খাওয়ার নিয়ম নেই সেই সময়ে।
* এছাড়াও শাস্ত্রে বলা রয়েছে, "বার্তাকু কার্তিককে বর্জ্যং মূলং বা বদরং মাঘে। চৈত্রে শিম্বী পুনস্তুম্বী ভাদ্রে বর্জ্যং দ্বিজাতিভিঃ।" যার অর্থ, দ্বিজাতিগণ কার্তিক মাসে বেগুন, মাঘ মাসে মুলো বা কুল, চৈত্রে শিম এবং ভাদ্র মাসে গোলাকার লাউ খাবেন না।
আরও পড়ুন: আশ্রমকে কেন্দ্র করেই পূণ্যস্নান! জানুন কপিল মুনির কাহিনী
তবে এই সমস্ত লোকাচার বা শাস্ত্রের নিয়ম ছোটরা বুঝবে না বা মানবে না। তাই তাদেরকে বাড়ির বড়রা ভয় দেখান এই বলে যে সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে পরীক্ষায় পাশ করা যায় না। হয় তারা লুকিয়ে কুল খান অথবা অধীর ভাবে অপেক্ষা করে সরস্বতী পুজোর, যাতে নারকেল, টোপা ইত্যাদি ভিন্ন ধরণের কুলের স্বাদ তারা নিতে পারে।