সূর্য নমস্কারপ্রাচীনকালে বহু মানুষের অভ্যাস ছিল নদীতে স্নানের পর সূর্য নমস্কার করা। আধুনিক যুগের ব্যস্ত সময়ে এমন দৃশ্য কম চোখে পড়লেও, গঙ্গা বা কোনও বড় নদীর ঘাটে বহু ব্যক্তিকে আজও সূর্য প্রণাম করতে দেখা যায়। অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র ধার্মিক কারণের জন্যই সকলে সূর্য নমস্কার করেন। আসলে কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। ধার্মিক কারণ ছাড়াও, সূর্য নমস্কারের বেশ কিছু বিজ্ঞানসম্মত লাভও রয়েছে।
ধার্মিক কারণ:
সূর্য সমগ্র মহাবিশ্বের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর জীবন্ত প্রাণীকূল তো বটেই, সমগ্র মহাবিশ্বকে শক্তি প্রদানও করে সূর্য। প্রাচীনকাল থেকেই সূর্যকে দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র এবং হিন্দু পুরাণে সূর্যের গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হিন্দুধর্মে সূর্য দেবতাকে জল উৎসর্গ করার বিধান রয়েছে। সূর্যকে জল উৎসর্গ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন যা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। এবার সূর্যকে জল উৎসর্গ করার পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বৈজ্ঞানিক কারণ:
সূর্য নমস্কারের এই রেওয়াজ আসলে শরীরের জৈবিক ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। নিজেদের এলাকা ছেড়ে দূরে কোনও রাজ্য বা দেশে গেলে, শরীর সেখানকার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় অনুসারে জৈবিক দৈনন্দিন রুটিন এবং শক্তির মাত্রা সামঞ্জস্য করে। এর অর্থ হল সূর্যের প্রভাব সরাসরি আমাদের শরীরকে প্রভাবিত করে।
অনেকেই জানেন না যে, সূর্য নমস্কারের সময় যখন আমরা জলের মধ্যে দিয়ে সূর্যের দিকে তাকাই, তখন সূর্যের সাতটি রশ্মি আমাদের চোখে পৌঁছায়। এটি দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী এবং শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই প্রক্রিয়াটিকে কালার থেরাপি বা ক্রোমোথেরাপিও বলে। মানসিক চাপ কমাতে এই প্রক্রিয়া বিশেষ উপকারী।
প্রাচীন মিশর থেকে এই ধারণা এসেছে। মিশরে মানুষ সূর্যের উপাসনা করত এবং বিশ্বাস করত যে রঙিন স্ফটিকের মাধ্যমে সঞ্চারিত সূর্যের রশ্মি রোগ নিরাময় করতে পারে। একইভাবে, প্রাচীন ভারতেও সূর্যের নৈবেদ্য শক্তি এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে মনে করা হত। ভারতের প্রাচীন মুনি ঋষিরা বিশ্বাস করতেন, সূর্যকে জল অর্পন করলে শরীর, মন এবং আত্মার জন্য প্রচুর উপকার পাওয়া যায়।