দুর্গাপুজোর পরে অর্থাৎ শরৎ পূর্ণিমার দিন যে লক্ষ্মী পুজো হয় তাকে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো বলে তা তো প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু কেন এই পুজোকে কোজাগরী বলা হয়, বা কোজাগরী শব্দের অর্থই বা কী, তা জানেন কি? কোজাগরী শব্দ এসেছে 'কো জাগতী' থেকে। যার অর্থ হল 'কে জেগে আছো?'
লক্ষ্মীপুজোর লোককথা
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, লক্ষ্মী হলেন ধন সম্পত্তির দেবী। আর কথিত আছে. কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোতে ধনদেবী আসেন মর্ত্যে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আশীর্বাদ দেন গৃহস্থকে। আর তার জন্য বাড়ির দরজা খোলা রাখতে হয়। কারণ দরজা বন্ধ থাকলে চলে যান মা লক্ষ্মী। অধরা থেকে যায় গৃহ সমৃদ্ধি। তাই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোতে রাত জেগে চলে ধনদেবীর আরাধনা। এই পুজোকে ঘিরে আরও একটি কাহিনী শোনা যায়। তা হল, কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন রাত জেগে পাশা খেললে ধনসম্পদ দান করেন দেবী। কারও কারও আবার বিশ্বাস, কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন অন্যের বাগান বা ক্ষেত থেকে ফল কিংবা সবজি চুরি করলে পাওয়া যাবে দেবীর আশীর্বাদ। যদিও এই সমস্ত বিশ্বাসই প্রচলিত কাহিনীর ওপরে তৈরি হওয়া।
কত রূপে লক্ষ্মী
কোজাগরী পূর্ণিমায় মূর্তি পুজো ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। কেউ ধান ভর্তি ঝুড়ির ওপরে দুটি গাছ কৌটো বা সিঁদুর কৌটোকে লাল চেলিতে মুড়ে লক্ষ্মীর রূপ দেন। একে বলা হয় আড়ি লক্ষ্মী। কেউ আবার, সরার পটচিত্রে লক্ষ্মী পুজো করেন। যেমন ঢাকাই সরা, ফরিদপুরী সরা, শান্তিপুরী সরা এবং সুরেশ্বরী সরা। বিভিন্ন অঞ্চলের রীতি অনুযায়ী চিত্র আঁকা হয় পটের ওপরে। পটে ফুটে ওঠেন, মা লক্ষ্মী, জয়া, বিজয়া, রাধাকৃষ্ণ বা সপরিবারে দুর্গা। সুরেশ্বরী সরায় আবার মহিষাসুরমর্দিনীর সঙ্গে নিচের দিকে আঁকা হয় মা লক্ষ্মীর ছবি। এছাড়া কলার বের বা বিশেষ ধরনের পোড়া মাটির ঘটকেও লক্ষ্মী জ্ঞানে পুজো করা হয়। কেউ কেউ আবার লক্ষ্মী পুজোয় কলার পেটোর তৈরি নৌকা ব্যবহার করেন। এই নৌকাকে বলা হয় সপ্ততরী, যা বাণিজ্যিক নৌকার প্রতীক। পুজোর সময় এই সপ্ততরীতে টাকা পয়সা ও শষ্য সহ নানান সামগ্রী রাখা হয়।