ডিএ আরও ৪ শতাংশ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে এবার থেকে ৪২ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পাবেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা। সেখানে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের দাবি, তাঁরা মাত্র ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাচ্ছেন। এতে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বেতনের ফারাক এখন ৩৬ শতাংশ। রাজ্য়ের সরকারি কর্মীদের অভিযোগ, ২০০৯ রোপা অনুযায়ী AICPI অনুযায়ী রাজ্য সরকার ডিএ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। ফলে কেন্দ্রীয় কর্মীদের তুলনায় লাখ টাকা কম বেতন পাচ্ছেন। তাঁরা কেন এই দাবি করছেন। সত্যিই কি লাখ টারা বেতন কম পাচ্ছেন ? রইল হিসেব।
শুক্রবার ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। ফলে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের জেরে প্রায় ১ কোটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরাও উপকৃত হবেন। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ডিএ দিতে কেন্দ্রের আরও ১২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা খরচ হবে।
কেন্দ্রের কর্মীদের থেকে দেড় লাখ টাকা কম পাচ্ছেন রাজ্য়ের কর্মীরা ? হিসেব দেখুন।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি, এখন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৪২ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন। আর রাজ্য সরকারি কর্মীরা পাচ্ছেন, ৬ শতাংশ। তাই ফারাক ৩৬ শতাংশের।
২০১৬ সালে এ রাজ্যের কোনও গ্রুপ ডি-র কর্মীর এন্ট্রি পয়েন্ট ছিল ১৭ হাজার টাকা। ২০২২ সাল পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট হয়ে তাঁদের বেতন দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার টাকা। রাজ্যের কর্মীদের AICPI অনুযায়ী ডিএ-র ফারাক ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২১ হাজার টাকার ৩৬ শতাংশ অর্থাৎ মাসে ৭৫৬০ টাকা। তাহলে বছরের হিসেবে প্রায় ৯০ হাজার ৭২০ টাকা মতো কম পাচ্ছেন গ্রুপ ডি-র কর্মীরা।
আরও পড়ুন : Firhad Hakim : কণ্ঠ আমার রুদ্ধ...\', ডিএ নিয়ে বারবার \'বেঁফাস\' ফিরহাদকে \'চুপ\' করাল তৃণমূল?
গ্রুপ সি কর্মীদের হিসেব
২০১৬ সালে গ্রুপ C-র কর্মী হিসেবে যিনি কাজে যোগ দিয়েছেন তাঁর এন্ট্রি পয়েন্ট ছিল ২২ হাজার ৭০০ টাকা। ২০২২ সাল পর্যন্ত তাঁদের ইনক্রিমেন্ট হয়ে বেতন দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১০০ টাকা। ৩৬ শতাংশ ফারাক অর্থাৎ ৯৭৫৬ টাকা। বছরে অঙ্কটা হল ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
আপার ডিভিশন ক্লাকদের হিসেবে
২০১৬ সালে আপার ডিভিশন কোনও ক্লাকের বেতন যদি ২৮৯০০ টাকা থেকে থাকে তাহলে তিনি ২০২২ সালে ইনক্রিমেন্ট হওয়ার পর বেতন পান প্রায় ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা। সেই হিসেবে মাসে ১২ হাজার ৪২০ টাকা কম পাচ্ছেন এই রাজ্যের সরকারি কর্মীকা। বার্ষিক ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
এই নিয়ে সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার AICPI অনুযায়ী ডিএ বৃদ্ধি করল। অথচ রাজ্যের কোনও হেলদোল নেই। সব রাজ্যে ডিএ বাড়ছে। আমাদের রাজ্যে বাড়ছে না। আসলে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদেরও আরও গরিব করে দিচ্ছেন। তিনি চাইছেন, সরকারি কর্মীদেরও অন্নপূর্ণা যোজনায় আনতে। সরকারের এই যে ডিএ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এতে সরকারি কর্মীরা ক্ষতি হচ্ছেন, সবথেকে বেশি বিপাকে পেনশনভোগীরা। তাঁদের তো ওষুধের খরচ অনেক বেশি। অনেককে গোটা সংসার টানতে হয় পেনশনের টাকাতে। তাঁরা সারাজীবন রাজ্যকে পরিষেবা দিলেন। অথচ তাঁরা শেষ জীবনে বঞ্চনার মধ্যে কাটাচ্ছেন।'
এই নিয়ে কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এই রাজ্যের সরকার কর্মীদের প্রথম থেকে বঞ্চনা করে আসছে। কেন্দ্রের সঙ্গে আমাদের বেতনের ফারাক এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছে যে, আমাদের জীবন যাপন করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তবে সেই হারে ডিএ বাড়েনি। ফলে সংসার চালানো খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে।'