ফাইল ছবি রাজ্য়ের ডিএ মামলা পিছিয়েছে আরও ২ মাস। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি ছিল। আর সেই শুনানিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের তরফে পরবর্তী এবং চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ১৫ মার্চ ২০২৩। অর্থাৎ সেই দিন রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ ভাগ্য নির্ধারিত হবে। কিন্তু সরকারি কর্মীদের একাংশের মতে, সোমবারই এই মামলা নিস্পত্তি হয়ে যেতে পারত। কিন্তু, এক মামলাকারী সংগঠনের দোষে তা হয়নি। সেজন্যই ফের ২ মাস পিছিয়ে গেল শুনানি। সত্যিই কি তাই ? কেন এমন অভিযোগ উঠে আসছে? আসলে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে ঠিক কী হয়েছিল?
মাননীয় বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী ও বিচারপতি ঋষিকেশ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। মামলাতে রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী ছিলেন অভিষেক মনুসিংভি। তিনি মহামান্য সুপ্রিম কোর্টকে জানান, লিগ্যাল সাবস্টিটিউশনের একটা প্রেয়ার আছে। স্বপন দে- নামে এক মামলাকারী নাম রয়েছে। তবে তিনি মৃত। তাঁর স্ত্রী'কে পক্ষ করার আবেদন জানানো হচ্ছে। তখন একজন মাননীয় বিচারপতি জানান, এতদিন পরে কেন এই প্রেয়ার করা হচ্ছে। আর যাকে সাবস্টিটিউট করা হচ্ছে তাঁর নামও ঢোকানো হয়নি। পাশাপাশি কোর্ট ফি যে ১০০ টাকা সরকারের দেওয়ার কথা সেটাও দেওয়া হয়নি। সরকার কেন দেয়নি ? তখন অভিষেক মনুসিংভি বলেন যে, যে ত্রুটি সরকারের পক্ষে হয়েছে তা শীঘ্রই সংশোধন করা হবে। একই সঙ্গে মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ ও ইউনিটি ফোরামের যিনি অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড রউফ রহিম তিনি মাননীয় বিচারপতিদের জানান, সরকার যে প্রেয়ারটা করেছে অর্থাৎ স্বপন দে'র স্ত্রীকে মামলায় সাবস্টিটিউট করার যে আবেদন তা যেন আজই গ্রাহ্য করা হয়। এবং সেই মোতাবেক ওকালতনামাও তাঁদের তরফে জমা দেওয়া হবে। তখন সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলোর পক্ষে যাঁরা আইনজীবী ছিলেন সেই বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস সামিম, বাঁশরি স্বরাজ এঁরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেন যেন, এই সাবস্টিটিউটশনের জন্য অন্য কোনও তারিখ দেওয়া না হয়। চূড়ান্ত শুনানির দিন ঘোষণা করার আবেদনও জানানো হয় তাঁদের তরফে। মাননীয় বিচারপতিরা সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ের কপি সেখানেই পরিষ্কার যে, তা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হবে ১৫ মার্চ।
আরও পড়ুন : প্যারাসিটামল-সহ ১২৮ টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দামে বদল, খরচ বাড়ল মধ্যবিত্তের ?
কিন্তু, সরকারি কর্মচারী ও মামলাকারী ২ সংগঠন সরকারি কর্মচারি পরিষদ ও ইউনিটি ফোরামের দাবি, এই মামলার নিষ্পত্তি হয়তো সোমবারই হয়ে যেত। ওই দুই সংগঠনের অভিযোগ, এই স্বপন-দে'কে মামলাতে যুক্ত করেছিল কনফেডারেশন। তাই তাঁদেরই দায় ছিল বিষয়টাতে নজর দেওয়া। এই দাবির স্বপক্ষে সরকারি কর্মচারি পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, এই যে মৃত স্বপন দে-র প্রসঙ্গ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে তুলল সরকার, এর দায় কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এড়িয়ে যেতে পারে না। সরকার সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এই প্রসঙ্গ তুলে আরও সময় ব্যয় করতে চেয়েছে। তবে কনফেডারেশন বা তাঁদের যাঁরা আইনজীবী ছিলেন তাঁরা বিষয়টাতে আগেই নজর দিতে পারতেন।
প্রায় একই অভিযোগ করছেন ইউনিটি ফোরামের আহ্লায়ক দেবপ্রসাদ হালদার। তাঁর অভিযোগ, আইনজীবী ফিরদৌস সামিমকে বিষয়টা আগেই জানানো হয়েছিল। তাঁদের আইনজীবী প্রবীর চট্টোপাধ্যায় ফিরদৌস শামিমকে বহুবার স্বপন দে-র নামটা তুলে তাঁর স্ত্রীকে সাবস্টিউট করার আবেদন জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন : 'মানুষের অবস্থা বুঝি', বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য বড় ঘোষণা করবে সরকার ?
প্রবীর চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে জানান, ফিরদৌস সামিমকে তিনি স্বপন-দের বিষয়টা জানিয়েছিলেন। তবে কেন সেটা করা হয়নি তাঁদের জানা নেই। যদি এটা হাইকোর্টেই করা হত তাহলে হয়তো মামলাটার নিষ্পত্তি হয়ে যেত সোমবারই।
যদিও দুই সংগঠনের অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'কারও কোনও অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করব না। আমরা সবাই সরকারি কর্মীদের পক্ষে লড়ছি। আর কনফেডারেশন মামলাটা প্রথম থেকে লড়ছে। সরকার এমনিতেও কোর্ট ফি-র ১০০ টাকা দেয়নি। সেজন্য মামলা হয়তো এমনিতেও পিছিয়ে যেত। আমরা সোমবারের মামলা নিয়ে আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি।'
আইনজীবী ফিরদৌস সামিমকে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিক বার ফোন করা হলেও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় পর্যন্ত তিনি ফোন ধরেননি।