বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance)-এর দাবিতে বিধানসভায় সরব রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বিধানসভা অধিবেশনে বক্তব্য দিতে উঠে শুভেন্দু কড়া হুঁশিয়ারি দেন রাজ্য সরকারকে। বলেন, 'বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দিতেই হবে রাজ্য সরকারকে।'
এদিন বিধানসভা অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, 'রাজ্যের লাখ লাখ সরকারি কর্মী ও পেনশনাররা বঞ্চিত। তাঁদের ডিএ ও ডিআর দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের সংসারে টানাপোড়েন চলছে। আর সরকার চুপ করে বসে আছে। এটা বরদাস্ত করা হবে না। ডিএ মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে (DA Case Supreme Court) বিচারাধীন। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই মামলা বারবার পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারি কর্মীদের ক্ষতি হচ্ছে। তাঁরা দিনের পর দিন অপেক্ষা করে আছেন। আমরা বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলতে চাই না। কিন্তু, এই সরকার বারবার বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলে।'
শুভেন্দুর আরও সংযোজন, 'রাজ্যের সরকারি কর্মীরা সরকারের দ্বারা অবহেলা, বঞ্চনার শিকার। কেন্দ্রীয় হারে সরকারি কর্মীদের ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে। আর্থিক নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করতে হবে সরকারি কর্মীদের। আর তা যত দ্রুত সম্ভব।'
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ডিএ-র দাবি তোলায় উজ্জীবিত সরকারি কর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, মামলাটি দীর্ঘ দিন ঝুলে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু বিরোধী দলনেতা বিধানসভায় এই প্রসঙ্গ তুলে সরকারি কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন। সেটা স্বস্তির খবর।
এই নিয়ে ডিএ নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম নেতা ভাস্কর ঘোষ বলেন, 'বিধানসভায় সরকারি কর্মীদের হয়ে কথা বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। সেজন্য তাঁর কাছে বিশেষ ভাবে আমরা কৃতজ্ঞ। এটা আমাদের লড়াইয়ের স্বীকৃতি। আইনসভায় বিষয়টা উঠেছে, সেজন্য বিরোধী দলনেতাকে শুভেচ্ছা। আমরা চাইব সরকার তার নিজের কর্মীদের দিকে তাকাক। তাঁদের বকেয়া মিটিয়ে দিক।'
সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারী সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদও শুভেন্দু অধিকারীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, 'শুভেন্দু অধিকারী যথার্য কথা বলেছেন। SAT ও হাইকোর্টের রায়ে বলা আছে ডিএ দিতেই হবে। যদিও মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে চলছে। সরকারের এখন এই মামলা নিয়ে কিছু করার নেই, তাই তারা সুপ্রিম কোর্টে বারবার সময় নষ্ট করছে বলে আমাদের মনে হয়। শুভেন্দু অধিকারী আমাদের সঙ্গেই আছেন, সেটা ফের প্রমাণিত হল। দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলার কারণে সরকারি কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, আজকের শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য সরকারি কর্মীদের উজ্জীবিত করবে।'
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টের ডিএ দেওয়ার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি দাখিল করেছে রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলা একাধিকবার পিছিয়েছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় মামলাটি ফের ওঠে। সেই সময় রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সুপ্রিম কোর্টকে জানান, মামলার নিষ্পত্তির জন্য আরও সময় প্রয়োজন। তার বিরোধিতা করেন সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির আইনজীবীরা। সেই মামলার শুনানির দিন স্থির না হলেও আগামী সেপ্টেম্বর তা ফের উঠতে পারে শীর্ষ আদালতে।
২০২২ সালের মে মাসে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তাদের যুক্তি, হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে ডিএ দিতে হলে প্রায় ৪১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা খরচ হবে। যা রাজ্য সরকারের পক্ষে বহন করা কঠিন। যদিও এদিন বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারী সাফ জানিয়ে দেন, খরচ যথি হোক না কেন রাজ্য সরকারকে দিতেই হবে ডিএ।