২০৩০ সালের মধ্যেই জার্মানিকেও টপকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে হাঁটছে ভারত। চলতি বছরের মে মাসেই জাপানকে পিছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হয়েছে ভারত। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, ভারতের জিডিপি দাঁড়িয়েছে ৪.১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই তালিকায় ভারতের উপরে মাত্র তিনটি দেশ; আমেরিকা, চিন এবং জার্মানি। নতুন সরকারি হিসাব বলছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই জার্মানিকেও টপকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে হাঁটছে ভারত। বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, বাণিজ্য যুদ্ধ, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন; সব কিছুর মধ্যেও ভারতের বৃদ্ধির গতি নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.২ শতাংশ। আগের ত্রৈমাসিকে এই হার ছিল ৭.৮ শতাংশ। তার আগের অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে ছিল ৭.৪ শতাংশ। টানা ছয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। সরকারি বক্তব্য, বিশ্ব বাণিজ্যের উপর চাপ থাকলেও ঘরোয়া চাহিদা এবং কাঠামোগত সংস্কারের জোরেই এই গতি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সরকারি হিসাব বলছে, এই ধারাবাহিক বৃদ্ধির জেরে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি পৌঁছতে পারে ৭.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তখন বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে ভারতের অবস্থান আরও শক্ত হবে। বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি আমেরিকা, দ্বিতীয় স্থানে চিন।
শুধু সরকারি দাবি নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, ২০২৬ সালে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হবে ৬.৫ শতাংশ। মুডিজ় জানিয়েছে, ২০২৬ ও ২০২৭; দু’বছরই জি-২০ দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা অর্থনীতি থাকবে ভারত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ২০২৫ সালের বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে ৬.৬ শতাংশ করেছে, ২০২৬ সালের জন্য ধরেছে ৬.২ শতাংশ। ওইসিডি-র হিসাবেও ২০২৫ সালে ভারতের বৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশে পৌঁছতে পারে।
রেটিং সংস্থা এস অ্যান্ড পি মনে করছে, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধি হবে ৬.৫ শতাংশ, পরের বছরে তা বেড়ে হতে পারে ৬.৭ শতাংশ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক ২০২৫ সালের বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে ৭.২ শতাংশ করেছে। ফিচ বলছে, ২০২৬ অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশ হতে পারে, যার মূল চালিকাশক্তি হবে ক্রমশ জোরালো হয়ে ওঠা ভোক্তা চাহিদা।
সরকারি বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, অর্থনীতির মৌলিক ভিত এখনও মজবুত। মুদ্রাস্ফীতি সহনসীমার নীচে রয়েছে। বেকারত্বের হার কমার পথে। রফতানির ছবিও ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হচ্ছে। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় তারল্য স্থিতিশীল, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ঋণপ্রবাহ শক্তিশালী। শহুরে ভোগব্যয় বাড়ছে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতি বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
সরকারের বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত, ২০৪৭ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে এগোচ্ছে ভারত। তার প্রতিফলনে কি আর্থিক সাম্য, পরিকাঠামোগত উন্নতি ও নাগরিক সচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে? তার উত্তর সময়ই দেবে।