ডিএ মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলায় রাজ্যের হয়ে লড়ছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনুসিংভি। তা নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ এই রাজ্যের কংগ্রেস কর্মী ও খোদ মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ। কারণ, কনফেডারেশন INTUC অনুমোদিত ও কংগ্রেস সমর্থিত সরকারি কর্মচারী সংগঠন। অথচ সুপ্রিম কোর্টে তাদেরই বিরোধিতা করছেন খোদ কংগ্রেস নেতা। দেখেশুনে সরকারি কর্মীদের মনে প্রশ্ন, অভিষেক মনুসিংভি একজন এতবড় কংগ্রেস নেতা। তাও তিনি কেন মামলা লড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করছেন।
প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে এই নিয়ে কোনও অফিশিয়াল মন্তব্য করা না হলেও দলের অন্দরের নেতারা যে মনুসিংভির উপর ক্ষুব্ধ তা কার্যত পরিষ্কার। সূত্রের খবর, এই নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে কানাঘুষো শুরু হয়েছে। দলের তরফে কোনও বক্তব্য সামনে না এলেও প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সুমন রায় চৌধুরী বলেন, 'আমি দলগতভাবে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। তবে অভিষেক মনুসিংভির উপর রাজ্যের নেতারা ক্ষুব্ধ বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ, একের পর এক মামলায় অভিষেক মনুসিংভি এই দুর্নীতিপরায়ণ রাজ্যের সরকারের হয়ে সওয়াল করছেন। রাজ্যের লাখ লাখ সরকারি কর্মী যে ডিএ-র দিকে তাকিয়ে আছেন সেই মামলাতেও উনি রাজ্যের সঙ্গ দিচ্ছেন। এটা কাম্য নয়। আমাদের দল ক্ষমতায় নেই, তারপরও বহু মানুষ এখনও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। অনেক সরকারি কর্মী আমাদের সমর্থন করেন। তাঁরাও কিন্তু মনুসিংভির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আমরা চাইব, উনি যেন এই দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের হয়ে মামলা না লড়েন। ভুলে গেলে চলবে না, উনি প্রথমত একজন কংগ্রেস কর্মী। তাই দলের প্রতিও তাঁর কর্তব্য আছে।'
রাজ্যের ডিএ মামলার প্রধান মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ। তাদের তরফে মলয় মুখোপাধ্য়ায় বলেন, 'আমরা বিষয়টা সম্পর্কে অবগত। আমাদের সংগঠন কংগ্রেস প্রভাবিত। অথচ সুপ্রিম কোর্টে অভিষেক মনুসিংভি আমাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। এতে আমরা হতাশ। এই বিষয়ে সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁরা বিষয়টা দেখবেন বলেছেন।'
আরও পড়ুন : অনুব্রত-কন্যার সঙ্গে ED-র হাতে গ্রেফতার হতে চাইছেন এই তরুণীও, কেন?
অভিষেক মনুসিংভির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রদেশ কংগ্রেসের মিডিয়া চেয়ারম্যান সৌম্য আইচ রায়ও। তিনি ফেসবুকে এই নিয়ে পোস্টও করেন।
ডিএ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে লড়ছেন বিজেপি প্রভাবিত সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদও। তাদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, 'কনফেডারেশন এই ডিএ মামলার প্রধান মামলাকারী সংগঠন। অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয় হল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা অভিষেক মনুসিংভি লড়াই করছেন নিজের দলের দ্বারা প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের বিরুদ্ধেই। এর আগে হাইকোর্টেও একই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল কনফেডারেশনকে। কারণ, সেই সময় তাদের আইনজীবী আমজাদ আলি হঠাৎ তৃণমূল বার অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন ও মামলা ছেড়ে দেন। এখন আবার কমফেডারেশনকে অভিষেক কাঁটায় পড়তে হচ্ছে।'
সরকারি কর্মচারী সংগঠন ও মামলাকারীরা যাই বলুন না কেন, এর জেরে সবথেকে বিপাকে পড়েছেন সরকারি কর্মী-শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা। তাঁদের প্রশ্ন, একাধিকবার এই অভিষেক মনুসিংভির সওয়ালের জন্য ডিএ মামলা পিছিয়ে গেছে শীর্ষ আদালতে। অথচ সরকারি কর্মীদের অনেকেই তাকিয়ে রয়েছেন কনফেডারেশনের দিকে। সেই কনফেডারেশনই যদি সুপ্রিম কোর্টে 'নিজেদের' আইনজীবীর অবস্থান স্পষ্ট করতে না পারে তাহলে মামলা জিতবে কীভাবে ?'