JEE Advanced 2025-এর রেজাল্ট বেরনোর পরেও ওয়েবসাইট দেখেননি কাটোয়ার দেবদত্তা মাজি। দেখেছিলেন তাঁর মা। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেশের তাবড় সংবাদমাধ্যমের হেডলাইনে এসে যায় দেবদত্তার নাম।
এবারের জেইই অ্যাডভান্সডে দেশের মধ্যে ১৬তম স্থান পেয়েছেন দেবদত্তা। মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ র্যাঙ্ক তাঁরই। এর পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গেও সেরা ব়্যাঙ্ক তাঁর।
কাটোয়া থেকেই বিশ্বজয়!
বিশ্বের অন্যতম কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা জেইই অ্যাডভান্সড। অনেকেই বড় শহরে এসে, কিংবা দিল্লি-কোটার মতো স্থানে গিয়ে বড় কোচিং সেন্টারে পড়তে যান। কিন্তু দেবদত্তা পুরোপুরি বাড়ি থেকে অনলাইনেই প্রস্তুতির পরিকল্পনা নেন। দেবদত্তার বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ায়। তাঁর এই সফরে পরিবারের অবদান অনেক। তাঁর মা একজন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা এবং বাবা কলেজের অধ্যাপক। বাড়িতে পড়াশোনার উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরি করেছিলেন তাঁরা।
দেবদত্তা বলেন, ‘আমাদের শহরতলির এলাকায় ভালো শিক্ষকের অভাব। তাই অনলাইন কোচিং ও দিল্লির শিক্ষকদের সাহায্য নিতে হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমার মা এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, যা পড়াশোনার জন্য আদর্শ।’
এই পরিবেশের ফল মিলেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি রাজ্যে প্রথম হন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন। এছাড়াও, তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ফিজিক্স অলিম্পিয়াড (INPhO)-এও উত্তীর্ণ হন।
সহজ এবং কনসিসটেন্ট রুটিন
অতিরিক্ত চাপের রুটিন নয়, বরং নিরবিচারে একটি স্থিতিশীল রুটিন অনুসরণ করতেন দেবদত্তা। তিনি বলেন, ‘আমার স্কুল আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। তাই আমি আত্ম-অধ্যয়নে অনেক সময় দিতে পেরেছি।’
তিনি FIITJEE eSchool-এর লাইভ অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছেন। দিল্লির শিক্ষকদের সঙ্গেই পড়াশোনা করেছেন। মোবাইল ফোন শুধুমাত্র ক্লাসের জন্য ব্যবহার করতেন। কোনো রকম বিনোদনের জন্য মোবাইল ব্যবহার করেননি।
থিওরি আগে, তারপরেই প্রবলেম সলভিং
প্রতিটি বিষয়ে আগে তত্ত্ব পড়ে, তারপর প্র্যাকটিস করতেন দেবদত্তা। তিনি বলেন, ‘তত্ত্ব পড়ার পর সমস্যার সমাধান করলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়।’
বহু পড়ুয়া যেখানে পদার্থবিদ্যা বা অঙ্কে সমস্যায় পড়ে, দেবদত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল রসায়ন। তিনি বলেন, ‘রসায়ন আমার কাছে কঠিন ছিল। FIITJEE-র শিক্ষকরা আমাকে সাহায্য করেছেন।’
সঠিক কোচিং এবং ফোকাস
দেবদত্তা বলেন, ‘সঠিক কোচিং দরকার হয় কারণ সেখানে শিক্ষকরা গাইড করেন, দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করেন।’ তাঁর মতে, কোচিং ছাড়াও রেফারেন্স বই থাকা দরকার।
তিনি কোনো সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকেননি। মোবাইল ফোন শুধুই পড়াশোনার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
আগামীর লক্ষ্য
তিনি বলেন, ‘আমি আইআইএসসি ব্যাঙ্গালোর থেকে BTech করতে চাই।’ যেখানে অনেকেই IIT Bombay বা Delhi-র কথা ভাবে, সেখানে দেবদত্তা গবেষণাভিত্তিক আইআইএসসি-কে বেছে নিয়েছেন।
ভবিষ্যতের পড়ুয়াদের উদ্দেশে দেবদত্তার বার্তা: ‘পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে এবং কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
কাটোয়ার ছোট শহর থেকে দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছেন দেবদত্তা। তাঁর এই যাত্রা প্রমাণ করে, মনোযোগ, ধৈর্য আর নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলে স্বপ্ন বাস্তব হয়।