

গত ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে যেখানে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক কান ধরে একটি রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে এক যুবককে।
এসআইআর প্রক্রিয়ার আবহে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “পাড়ায় পাড়ায় বাংলাদেশি তাড়ানো অভিযান... "আমার পাড়া রোহিঙ্গা বাংলাদেশি তাড়া"।”

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে বর্তমান এসআইআর বা অবৈধ কোনও অনুপ্রবেশকারীর কোনও সম্পর্ক নেই। এই ভিডিওটি কয়েকমাস আগেকার এবং দুর্গাপুরের যখন এক যুব মোর্চা নেতা গরু পাচারকারী সন্দেহে কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তিকে নিগ্রহ করে।
সত্য উন্মোচন
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তা রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও পাওয়া যায় আমাদের বাংলা নামের একটি ফেসবুক পেজে। ১২ অক্টোবর সেই পেজে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “দুর্গাপুরে পারিজাত গাঙ্গুলীর দাদাগিরি দেখুন।”
এই সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে চলতি বছর ১ অগস্ট কলকাতা ২৪x৭ এবং ২ অগস্ট সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত বেশ কিছু রিপোর্ট পাওয়া যায়। এই রিপোর্টগুলো থেকে জানা যায়, ৩১ জুলাই দুর্গাপুরের কোকওভেন থানার গ্যামন ব্রিজ এলাকায় বাঁকুড়ার হাট আশুড়িয়া থেকে গরু কিনে ফেরার সময় কয়েকজন মুসলিম ব্যবসায়ীকে নিগ্রহ এবং হেনস্থা করে জনাকয়েক বিজেপি কর্মীরা।

অভিযোগ, দুর্গাপুরের বিজেপির নেতা পারিজাত গাঙ্গুলির নেতৃত্বে জনাকয়েক গরু বোঝায় গাড়ি আটকায়। বৈধ চালান ও রসিদ থাকলেও বৃদ্ধ গরু ব্যবসায়ীদের গলায় দড়ি বেঁধে ফেলে রাখা হয়। প্রবীণ চাষি ও ব্যবসায়ীদের উপর নিপীড়ন চালানোর ভিডিও ভাইরাল হয়। ব্যবসায়ীকে মারধর করে তাঁর সব টাকাও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ওই গোরুগুলিকেও।
পুলিশ তদন্তে নেমে শুক্রবার রাতে দুই অভিযুক্ত অনীশ ভট্টাচার্য ও দীপক দাসকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ভিডিওতে থাকা মূল ব্যক্তি অর্থাৎ পারিজাত গাঙ্গুলী পলাতক হয়ে যায়। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের কমিশনার সুনীল চৌধুরী বলেন, “এসব ঘটনাকে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। মূল অভিযুক্ত পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপি করেন। তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “আক্রান্তরা কৃষিকাজের জন্যে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের মারধর করে টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। পুলিশ কড়া করে পদক্ষেপ নেবে।”
১০ অগস্ট প্রকাশিত হিন্দুস্তান টাইমস ও এই সময়ের খবরে লেখা হয়, এই ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর, ১০ অগস্ট ঝাড়খন্ডের ধানবাদ থেকে পারিজাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখান থেকে গ্রেফতার করে পারিজাত গাঙ্গুলীকে দুর্গাপুর নিয়ে আসা হয়। পারিজাতের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন, ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পুলিশ আইনত ব্যবস্থা নেবে।’
ফলে সব মিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে একটি অসম্পর্কিত ভিডিও ছড়িয়ে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বা রোহিঙ্গা তাড়ানোর দাবি করা হচ্ছে যা অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে পাড়ায় পাড়ায় অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গা তাড়ানো হচ্ছে।
এই ভিডিওটি দুর্গাপুরের, গত জুলাই মাসের যখন কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গরুপাচারের অভিযোগ তুলে হেনস্থা করেছিলেন পারিজাত গাঙ্গুলী নামে এক বিজেপি নেতা।