

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরবর্তী সময়ে দেশটিতে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে একাধিক হামলার খবর সামনে এসেছিল। এরই মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত ২৫ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় ইসকনের বহিস্কৃত নেতা তথা বাংলাদেশের সনাতনী জাগরণ জোটের মুখ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তাঁর গ্রেফতারের পর থেকে পুনরায় দেশটিতে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের খবর সামনে আসতে শুরু করেছে।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে আগুনে ভস্মীভূত একটি ধানের জমিতে এক ব্যক্তি ও একজন মহিলাকে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন আরও বেশ কিছু মানুষ। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে যে ব্যক্তিকে অসহয়ভাবে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে তিনি একজন বাংলাদেশি হিন্দু এবং দেশটির কট্টরপন্থী মুসলিমরা তার জমির ধানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বাংলাদেশী ইসলামপন্থীরা হিন্দুদের পাকা ধান ক্ষেতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। আর কতোক্ষন সহ্য করবেন আপনি?” (সব বানান অপরিবর্তিত।)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তিনি হিন্দু নয় বরং বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মুসলিম কৃষক নাসিম মিয়া। চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর তাঁর দেড় বিঘা ধানের জামিতে দুষ্কৃতীরা আগুন লাগিয়ে দেয়।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে সেটির কি-ফ্রেম সার্চ করলে ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশি সাংবাদমাধ্যম দেশ টিভির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একই ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, “রাতে পেট্রোল দিয়ে কৃষকের ধানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা #kushtianews.” পাশাপাশি ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিওর ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে ওই কৃষককে “আল্লাহ খুব ভালো ধান দিয়েছিল” বলতে শোনা যাচ্ছে। যা থেকে অনুমান করা যায় যে তিনি হিন্দু নয় বরং মুসলিম হতে পারেন।
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর অপর এক বাংলাদেশি সাংবাদমাধ্যম চ্যানেল ২৪-এর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে ভাইরাল ভিডিওর কৃষকের ছবি-সহ উল্লেখ করা হয়েছে, “কুষ্টিয়ায় নাসিম মিয়া নামে এক কৃষকের দেড় বিঘা জমির ধান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত ভোর রাতে সদর উপজেলার পিয়ারপুর লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে এই ঘটনা ঘটে। কৃষক নাসিম মিয়া জানান, লক্ষ্মীপুর মাঠে দেড় বিঘা জমি লিজ নিয়ে ধানের আবাদ করেছেন তিনি। ফলনও ভালো হয়। কয়েকদিন আগে ধান কেটে আটি বেধেঁ মাঠেই ৪টি পালা করে রাখা হয়। ভোররাতে কে বা কারা পেট্রোল দিয়ে ধানের ৪টি গাদিতেই আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।”

এই সংক্রান্ত পরবর্তী সার্চে ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর অপর এক বাংলাদেশি সাংবাদমাধ্যম নিউজ-২৪’র অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভাইরাল কৃষকের একটি ছবি-সহ এই একই তথ্য উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, “কুষ্টিয়ার কৃষক নাসিম মিয়া লিজ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিল। তবে সেই ধান আর ঘরে তুলতে পারেননি তিনি। মাঠে কেটে রাখা পাকা ধান পেট্রোলের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে আমার ফোর্স গিয়েছিল। তাতে মনে হয়েছে কেউ আগুন লাগিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফী মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান জানান, বিষয়টি শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। তবে গরিব এই কৃষক পরিবারকে কোনো প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না, তা দেখা হবে।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে বাংলাদেশে হিন্দু কৃষকের ধানের জমিতে মুসলিমরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসলিম কৃষকের ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে।

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে কট্টরপন্থী মুসলিমরা হিন্দু কৃষকের ধানের জমিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
ভিডিওটিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তিনি হিন্দু নয় বরং বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মুসলিম কৃষক নাসিম মিয়া।