
ইদানীং বেশ কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকার একটি কয়েনের ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার করছেন। সেই ছবিটি শেয়ার করে তাঁরা দাবি করছেন, মহাপ্রভূ শ্রীশ্রী চৈতন্যদেবের বৃন্দাবনে পদার্পণের ৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারত সরকার নাকি ৫০০ টাকার একটি কয়েন বা মুদ্রা প্রকাশ করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ইউজার ৫০০ টাকার একটি কয়েনের দুটি পিঠের ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, "মহাপ্রভূ শ্রীশ্রী চৈতন্যদেবের পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র শ্রীধাম বৃন্দাবনে আগমনের ৫০০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫০০ টাকার মুদ্রা প্রকাশ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।"
এই একই দাবি প্রচার করে একটি পোস্টকার্ডও ভাইরাল করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই পোস্টকার্ডে লেখা হয়েছে, "ভারত সরকারের নতুন ৫০০ টাকার কয়েন। রয়েছে কলিযুগের পাবনাবতারি পরমেশ্বর ভগবান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর ফলক। শ্রী চৈতন্যদেবের বৃন্দাবনে আসার ৫০০ তম বর্ষপূর্তির প্রতিকৃতি।"
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, এই কয়েন প্রকাশের ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয়, বরং ছয় বছর আগেকার। দ্বিতীয়ত, এই কয়েনটি স্মারকরূপে প্রকাশ করা হয়েছিল। বাজারে কেনাবেচার মতো মুদ্রা হিসেবে নয়।
আফয়া অনুসন্ধান
সবার প্রথম আমরা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করি যে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনও মুদ্রা প্রকাশ করা হয়েছে কিনা। এমন কয়েন সম্প্রতি প্রকাশ পেলে তা নিয়ে কোনও না কোনও খবর অবশ্যই প্রকাশ পেত। কিন্তু এমন কোনও খবর আমাদের নজরে পড়েনি।
এরপর আমরা এই কয়েনের বিষয়ে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন বিপণন সংস্থা স্ন্যাপডিলের ওয়েবসাইটে এই কয়েনটি আমরা খুঁজে পাই। সেখানে লেখা ছিল যে, "Issued by Indian Government Mint (IGM)" কলকাতা শাখা দ্বারা এটি প্রকাশ করা হয়েছিল। যদিও সেটা কবে প্রকাশ পেয়েছিল সেই সম্পর্কে কোনও তথ্য আমরা সেখানে পাইনি।
তবে এর থেকে সূত্র নিয়ে আমরা Indian Government Mint-এর ওয়েবসাইটে এই কয়েনটির বিষয়ে খুঁজে দেখি। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি যে, ১৫১৫ সালে চৈতন্য মহাপ্রভু বৃন্দাবনে আসার ঠিক ৫০০ বছর পূরণ হওয়ার পর, অর্থাৎ ২০১৬ সালে এই কয়েকটি আত্মপ্রকাশ করে। যদিও এটি কোনও বিপণনের যোগ্য মুদ্রা নয়, বরং একটি স্মারক মাত্র। ভারত সরকারের ওয়েবসাইটে যে স্মারকটি ৬০০৭ টাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে।
যদি এটি সাধারণ লেনদেন যোগ্য মুদ্রা হতো, তবে নিশ্চই ৬০০৭ টাকায় সেই মুদ্রা বিক্রি করা হতো না।
এর পাশাপাশি ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের পক্ষ থেকেও ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা হয় যে ওই দিন ৫০০ টাকার ওই স্মারক মুদ্রার পাশাপাশি ১০ টাকার কয়েনও চালু হয়েছিল।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, ছয় বছর পুরনো একটি খবর বর্তমান সময়ের দাবিতে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ভারত সরকার চৈতন্য মহাপ্রভুর বৃন্দাবন আসার ৫০০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫০০ টাকার একটি কয়েন প্রকাশ করেছে।
এই কয়েনটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশ পেয়েছিল। সেই সঙ্গে এটি লেনদেনের কোনও মুদ্রা নয়, বরং এক স্মারক।