ফ্যাক্ট চেক: ভারতে মিসাইল হানার দাবিতে এবার অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ছড়াচ্ছে পাক-বাংলাদেশী হ্যান্ডেলগুলি  

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে একাধিক অন্য ধরনের ভিডিও, যেখানে নানা এলায় আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওগুলি ছড়িয়ে বাংলাদেশ-ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও প্রোফাইলগুলি থেকে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে পাকিস্তানের মিসাইল হানার দৃশ্য।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: ভারতে মিসাইল হানার দাবিতে এবার অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ছড়াচ্ছে পাক-বাংলাদেশী হ্যান্ডেলগুলি  

পাকিস্তানে ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে, এই দাবি করে নানা ধরনের ছবি ছড়ানো হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই নিয়ে একটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল আজতক বাংলার তরফে।

এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে একাধিক অন্য ধরনের ভিডিও, যেখানে নানা এলায় আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওগুলি ছড়িয়ে বাংলাদেশ-ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও প্রোফাইলগুলি থেকে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে পাকিস্তানের মিসাইল হানার দৃশ্য।

প্রথম ভিডিওতে একটি রাস্তার ধারে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে দেখা যাচ্ছে। অদূরেই আবার দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা! কেঁপে উঠলো ভারতের আমৃতসর, বাতালা ও জলন্ধর! পাকিস্তান জিন্দাবাদ।"

তবে ভিডিওটির কিফ্রেম গুগল লেন্সে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এই একই ভিডিও গত ২৩ এপ্রিল একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছিল। পোস্ট করে ক্য়াপশনে লেখা হয়, বালিয়া জেলার পাচখোরায় আগুন লেগে পাঁচটি পরিবারের সর্বস্ব পুড়ে ছাই।

এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে একই ভিডিও-সহ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায় দৈনিক জাগরণের একটি খবরে, যা গত ২৩ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে লেখা হয়, উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার সুখপুরা থানার পাচখোরা এলাকায় দুপুরবেলা মারাত্মক আগুন লাগার ঘটনা ঘটে এবং নিমেশেই বেশ কয়েকটি বস্তি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ভিডিওটি কলকাতার পার্ক সার্কাস স্টেশন এলাকায় কালো ধোঁয়া কুণ্ডুলি পাকিয়ে ওপরে উঠতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এবার পাকিস্তানের হামলায় লন্ড*ভন্ড হলো ভারতের একটি পার্ক।"

এই ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধান করলে একই ভিডিও আমরা দেখতে পাই একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে। যা গত চলতি বছরের গত ২৬ জানুয়ারি পোস্ট করা হয়েছিল। ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, "আগুন লেগেছে। খুব জোরে।"

Advertisement

এরপর কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা খোঁজার চেষ্টা করি এই বছর জানুয়ারি মাসের ওই সময় নাগাদ পার্ক সার্কাস স্টেশন বা স্টেশনের চত্বরে কোনও আগুন লেগেছিল কিনা। তখন গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত একাধিক নিউজ রিপোর্ট পাওয়া যায় যা আনন্দবাজারটিভি ৯ বাংলা, এবং সংবাদ প্রতিদিনের মতো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল। 

সেই সঙ্গে আমরা জ়ি ২৪ ঘণ্টার ইউটিউব চ্যানেলে আগুনের একটি পৃথক ভিডিও পাই। যেখানে স্টেশন ভবনের উপরের অংশ অন্য দিক থেকে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটি দেখলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে আগুন স্টেশনে লাগেনি। ভাইরাল ভিডিওটি যেহেতু ভবনের নীচের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে তাই আগুন স্টেশন ভবনে লেগেছে এমনটা মনে হতে পারে। নীচে সেই ভিডিওটি দেখা যাবে।   

তৃতীয় ভিডিওতে এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদনের ক্লিপ শেয়ার করে ইংরেজিতে লেখা হয়, "দিল্লি পুড়ছে, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।"

অনুসন্ধানে দেখা যায় এই ভিডিওটি গত ৭ দিন আগের, অর্থাৎ ১ মে-র। আসল ঘটনাটি দিল্লি হাট নামক বাজারে আগুন লাগার। এনডিটিভির ইউটিউব চ্যানেলে আসল ভিডিওটি পাওয়া যাবে। এই অগ্নিকাণ্ডে ২৫টি দোকান পুড়ে গিয়েছিল বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়।

চতুর্থ ভিডিওতে একটি বড় রাস্তার ধারে দুটি আর্মির গাড়ি থেকে কিছু সেনা সদস্যদের নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় ধারে সাধারণ জনতাকে উৎসাহ নিয়ে ভিডিও রেকর্ড করতেও দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি সবার প্রথম উর্দু ভাষায় পাকিস্তানি ব্যবহারকারীরা পোস্ট করে যা থেকেন তার অনুবাদ দাঁড়ায়, "আজ সকালে পাকিস্তান ভারতের যে এলাকায় সারপ্রাইজ দিলো।"

এরপর বাংলাদেশী ব্যবহারকারীদের হ্যান্ডেল থেকে সেই একই ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, "পাকিস্তানি মিজাইল ভারতের যে জায়গায় পড়ে তছনছ "করে দিল! "আলহামদুলিল্লাহ" ভারতের মিডিয়া গুলো লজ্জায় এই ভিডিওগুলো প্রকাশ্যে আনতে পারছে না।"

তবে আমাদের অনুসন্ধানে এই দাবিও মিথ্যে প্রমাণিত হয়। ভিডিওটি কতদিন আগের এবং কোন ঘটনার তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এটি যে ভারতের নয়, তা জানা যায়।

ভাইরাল ভিডিওটি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে এর মধ্যে এক জায়গায় একটি বাইকের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে ইংরাজিতে "Nepal's Highest Selling Motorcyle" কথাটি লেখা রয়েছে দেখা যায়। যা থেকে অনুমান করা সম্ভব যে ভিডিওটি নেপালের হতে পারে।

সেই সঙ্গে এই ভিডিওতে 'বার্গার স্টেশন'-নামের একটি স্টোর ও তার পাশেই মাইলস্টোন ইন্টারন্যাশনাল কলেজের একটি সাইনবোর্ড দেখা যায়। এই সূত্রগুলিকে অনুসরণ করে গুগল ম্যাপে খোঁজা হলে ওই একই কলেজ ও বার্গার স্টোর পাশাপাশি দেখা যায়, যা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু শহরের ললিতপুরে অবস্থিত শহিদ সুকরারাজ মার্গে দেখা যায়।

উভয়ের তুলনা করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিওটি ভারতের কোনও এলাকার নয়, বরং নেপালের।

এই ঘটনাবলি থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়, কীভাবে প্রথম ধাপে পুরনো ও অপ্রাসঙ্গিক ছবির পর এ বার আগুন লাগা ভিডিও এবং অন্যান্য স্থানের ভিডিওকে ভারতে পাকিস্তানি হামলার দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

facebook users

দাবি

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে ভারতে মিসাইল হামলা করছে ভারত।

ফলাফল

একটিও ভিডিও মিসাইল হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বরং এগুলো পুরনো আগুন লাগার ভিডিও। চতুর্থ ভিডিওটি নেপালের।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement