ফ্যাক্ট চেক: গাজার বন্যা কবলিত মানুষের দৃশ্য দাবিতে ছড়াল AI নির্মিত ভিডিও

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, যদিও এটা ঠিক যে চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর শক্তিশালী ঝড় বায়রনের কারণে হওয়া অতিবৃষ্টির জেরে বন্যা কবলিত হয়েছে গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে ভাইরাল ভিডিওগুলি সেই বন্যার নয়, বরং সেগুলি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: গাজার বন্যা কবলিত মানুষের দৃশ্য দাবিতে ছড়াল AI নির্মিত ভিডিও

গত বৃহস্পতিবার শক্তিশালী ঝড় বায়রনের জেরে হওয়া টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গাজায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যেই হঠাৎ বন্যার জেরে বিপদের মুখে পড়েছেন প্যালেস্টাইনের প্রায় ১৫ লক্ষ বাস্তুচ্যুত মানুষ। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে বন্যা কবলিত মানুষের নিজেদের রক্ষার চেষ্টার তিনটি ভিডিও ক্লিপ। 

যেমন, প্রথম ক্লিপে বেশকিছু জন এবং দ্বিতীয় ক্লিপে ছয়জন বাচ্চাকে জলের উপরে দুটি আলাদা তাবুর ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে তৃতীয় ক্লিপে কয়েকজন মহিলা এবং পুরুষ কোলে বাচ্চা নিয়ে কোমর সমান জলে হেঁটে একটি তাবুর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছেন। প্রতিটি ক্লিপ শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলি প্যালেস্টাইনের গাজায় বন্যা কবলিত মানুষের নিজেদের রক্ষার চেষ্টার ভিডিও। 

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এমনই একটি ক্লিপ শেয়ার করে লিখেছেন, “গাজা ভয়াবহ অবস্থা, গাজায় বৃষ্টি ও বন্যা জঞ্জাল গাজায় স্টর্ম বা ভয়াবহ ঝড় “Byron” আঘাত করেছে, যা বহু ত্রাণ শিবির ও তাঁবুতে পানি ঢুকিয়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে পানিবন্দী শরণার্থী ও অবকাঠামো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।…” (সব বানান অপরিবর্তিত)

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, যদিও এটা ঠিক যে চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর শক্তিশালী ঝড় বায়রনের কারণে হওয়া অতিবৃষ্টির জেরে বন্যা কবলিত হয়েছে গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে ভাইরাল ভিডিওগুলি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

সত্য উন্মোচন

প্রথম ক্লিপ: ক্লিপটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে তাতে একাধিক অসঙ্গতি দেখা যায়। যেমন, ভিডিওতে থাকা বাচ্চাদের অনেকের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মুখের আকৃতিতে বিকৃতি এবং   বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি দেখা যায়। এমনকি তাদের নড়াচড়ার মধ্যেও একটা অযৌক্তিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। এইসব সূত্র থেকে সন্দেহ তৈরি হয় যে ভাইরাল ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হতে পারে।

Advertisement

তবে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ভিডিওটি থেকে একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে গুগল লেন্সে সার্চ করলে চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর yafi_gaza নামক একটি টিকটক হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। সেই ভিডিওতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভিডিওটি বাস্তব কোনও ঘটনার নয়। বরং সেটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, হ্যান্ডেলটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে সেখানে একই ধরনের অসংখ্য এআই-জেনারেটেড ভিডিও পাওয়া যায়। তবে বিষয়টি সম্পর্কে একশো শতাংশ নিশ্চিত হতে এরপর আমরা ভাইরাল ভিডিওটিকে Hive Moderation নামক এআই যাচাইকারী ওয়েবসাইটে পরীক্ষা করি। ওয়েবসাইটি ৮৪.৯ শতাংশ নিশ্চিতভাবে জানিয়েছে যে ভাইরাল ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ক্লিপ: দ্বিতীয় ক্লিপটিতেও প্রথম ক্লিপের মতোই একই ধরনের সব অসঙ্গতি দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্লিপের পিছনের দিকে থাকা কোলের বাচ্চাটির মুখের এবং পায়ের বিকৃত আকৃতি। যা থেকে দ্বিতীয় ক্লিপটিও এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হতে পারে বলেই সন্দেহ তৈরি হয়।

এরপর ক্লিপটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে গুগল লেন্সে সার্চ করলে চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর @mirha_binte_gaza1 নামক একটি টিকটক হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। সেই ভিডিওতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, হ্যান্ডেলটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে সেখানেও একই ধরনের অসংখ্য এআই-জেনারেটেড ভিডিও পাওয়া যায়। পাশাপাশি, এআই যাচাইকারী ওয়েবসাইট Hive Moderation-ও ৯১.৯ শতাংশ নিশ্চিতভাবে জানিয়েছে যে ভাইরাল ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

তৃতীয় ক্লিপ: তৃতীয় ক্লিপটিতেও প্রথম এবং দ্বিতীয় ক্লিপের মতোই তাতে থাকা অনেকের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং মুখের আকৃতিতে অসঙ্গতি দেখা যায়। যা থেকে তৃতীয় ক্লিপটিও এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হতে পারে বলেই সন্দেহ তৈরি হয়। এরপর ক্লিপটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে গুগল লেন্সে সার্চ করলে চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর ahte_gaza3 নামক অন্য একটি টিকটক হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়।

সেই ভিডিওতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, হ্যান্ডেলটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে সেখানেও একই ধরনের অসংখ্য এআই-জেনারেটেড ভিডিও পাওয়া যায়। এমনকি এক্ষেত্রেও এআই যাচাইকারী ওয়েবসাইট Hive Moderation-ও ১০০ শতাংশ নিশ্চিতভাবে জানিয়েছে যে ভাইরাল ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, গাজার বন্যা কবলিত মানুষের দৃশ্য দাবিতে শেয়ার করা ভিডিও ক্লিপগুলি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ভিডিওগুলিতে বন্যা কবলিত গাজাবাসীর নিজেদের রক্ষার চেষ্টার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

ফলাফল

গত ১১ ডিসেম্বর টানা ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে বন্যা কবলিত হয়েছে গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে ভাইরাল ভিডিওগুলি সেই বন্যার নয়, বরং সেগুলি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement