
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসার পর থেকে ভারতেই অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তাঁকে ঘিরে জাল-জল্পনার শেষ নেই। এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে, মুম্বই থেকে বিজেপির প্রতীক দেওয়া মঞ্চে তিনি বক্তব্য় রাখছেন।
এই ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বেশ কয়েকবার দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু বিদেশি প্রতিনিধি এবং লোকসভার সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ভিডিওতে শেখ হাসিনা আবেগপ্রবণভাবে বলছেন তিনি কাউকে রাজাকার বললেননি। পাশাপাশি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েও আলোচনা করছেন। সেই সঙ্গে কোটা আন্দোলনে তৈরি হওয়া সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।
এই ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হয় যে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই ভাষণ দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "আমার পদত্যাগপত্র পাওয়া যায়নি, আমি এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ভিডিওটি সম্পাদিত। হাসিনার আসল ভিডিওটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসের এবং মোদীকে যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তা জুন মাসের।
যেভাবে জানা গেল সত্য
ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনাকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রকাশ্য সমাবেশে, বা জনসমক্ষে আসেননি। সেই সংক্রান্ত কোনও খবরও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসেনি। সেই কারণে আমরা হাসিনার ভিডিওটির উৎস জানতে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খোঁজা শুরু করি।
তখন ওই ভিডিওটি আমরা দেখতে পাই Desh TV News নামের বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পাই যা ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই আপলোড করা হয়েছিল। যেখানে শেখ হাসিনাকে হুবহু ওই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে, একই শাড়ি পরে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখতে শোনা যায়। তবে সেখানে মঞ্চের সামনে কোনও বিজেপি প্রতীক ছিল না।
সেই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, "শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি: প্রধানমন্ত্রী।" অর্থাৎ তাঁর এই বক্তব্য যে বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন চলাকালীন তা এর থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে বাংলা ট্রিবিউনের একটি রিপোর্ট পাওয়া যায়। যেখানে লেখা হয় যে ২৬ জুলাইয়ের নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভির কার্যালয় পরিদর্শন শেষে রাজধানী ঢাকায় তিনি এসব কথা করেন। অর্থাৎ শেখ হাসিনার ভাষণের এই ভিডিওটি ভারতের নয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে যে ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে, সেটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে হুবহু একই ফ্রেম দেখতে পাওয়া যায় মিরর নাও-এর একটি ভিডিওটি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর সংসদের হলে এনডিএ জোটসঙ্গীদের বৈঠকের সময়ের সেই ভিডিও বলে জানানো হয়। ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ মোদীকেও এই ভিডিওতে বেশ কয়েকবার হাসতে দেখা যায় যে সময়ে আসলে জেডিইউ প্রধান নীতিশ কুমার বক্তব্য রাখছিলেন।
অন্যদিকে, ভাইরাল ভিডিওর আরেকটি অংশে বেশ কিছু বিদেশি প্রতিনিধিকেও দেখা যাচ্ছিল। সেই ভিডিওটি আসলে নেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অংশ থেকে। ভিডিওটি ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদীর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছিল এবং সেদিন প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অ্যাসেম্বলি উদ্বোধন করেন।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, একটি সম্পাদিত এবং অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভারতের মুম্বই থেকে বিজেপির মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাশে রেখে বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা।
ভাইরাল ভিডিওটি সম্পাদিত যা তিনটি আলাদা-আলাদা ভিডিও জুড়ে তৈরি। মূল ভিডিওটি দেখতে পাওয়া বক্তব্য হাসিনা ২০২৪ সালে জুলাই মাসে ঢাকায় রেখেছিলেন।