
গত ১৩ জানুয়ারি থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভমেলা। প্রতি ১২ বছর অন্তর একবার আয়োজিত হয় পূর্ণকুম্ভ। আর ১২টি পূর্ণকুম্ভের পর আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ। অর্থাৎ ১৪৪ বছরে একবার বসে মহাকুম্ভের আসর। শেষবার ভারত স্বাধীনের আগে ১৮৮১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মহাকুম্ভ।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে তথাকথিত কুম্ভমেলা সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে দু’জন সাধুকে এক অপরের সঙ্গে হাতাহাতি করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, খাবার বিতরণকে কেন্দ্র করে কুম্ভমেলায় মারামারি করছেন ওই দুই সাধু। উদাহরণস্বরূপ, এক এক্স ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “হিন্দু সাধুরা "কুম্ভ মেলা"-তে খাবার বিতরণ নিয়ে ঝগড়া করেছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ ফেসবুকেও ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
হিন্দু সাধুরা "কুম্ভ মেলা"-তে খাবার বিতরণ নিয়ে ঝগড়া করেছে। pic.twitter.com/DoE6zeUDst
— কুইন অফ বাংলাদেশ (@QueenBangla) January 12, 2025
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, দুই সাধুর হাতাহাতির ভিডিওটি মহাকুম্ভমেলার নয়। বরং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে তোলা হয়েছিল।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, ভাইরাল ভিডিওর দাবিটি সন্দেহজনক। কারণ কুম্ভমেলায় দুই সাধুর মারামারির দৃশ্য দাবিতে শেয়ার করা ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে একাধিক পাহাড় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভমেলা বা তার পার্শ্ববর্তী স্থানে কোনও পাহাড় নেই। যা থেকে অনুমান করা যায় যে ভিডিওটি কুম্ভমেলার না হয়ে অন্য কোনও স্থানের হতে পারে।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভাইরাল ভিডিও থেকে একাধিক স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে সেটিকে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথের দৃশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই Dhinchak khabare নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে এবং ওই বছরের ১৭ জুলাই JK News7 নামক একটি ফেসবুক পেজেও এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। উভয় ক্ষেত্রেই ভিডিওটিকে কেদারনাথের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর আমরা আমাদের পরবর্তী অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে কেদারনাথ ভ্রমণের ৫টি ছবি খুঁজে পাই। সেই পোস্টের ৪ নম্বর ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর ৯ সেকেন্ডের ফ্রেমের তুলনা করলে উভয়ের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় এবং এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিওটি কুম্ভমেলা নয় বরং কেদারনাথে তোলা হয়েছিল। নিচে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে প্রাপ্ত ছবির তুলনা দেখা যাবে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে কুম্ভমেলায় সাধুদের মারামারির দৃশ্য দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে কেদারনাথের পুরনো ভিডিও।
খাবার বিতরণকে কেন্দ্র করে কুম্ভমেলায় মারামারি করছেন দুই সাধু।
দুই সাধুর হাতাহাতির ভিডিওটি কুম্ভমেলার নয়। বরং উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে তোলা হয়েছিল।