
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে আরবের সব দেশগুলি সম্মিলিতভাবে ইজরায়েলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এই প্রথম এহেন বড় কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
রিল আকারে একটি পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে তাতে লেখা হয়েছে, “আকাশ বন্ধ করলো আরবরা! ইস"রায়েলের বেহুঁশদশা! এই প্রথম ইজরায়েলের বিপক্ষে এতো বড় কোনো পদক্ষেপ নিলো আরব দেশগুলো, এখন থেকে ইজরায়েল আর কোনো আরব দেশের আকাশসীমা ব্যাবহার করতে পারবে না। স্যালুট জানাই আরব দেশগুলোকে।” (পোস্টে থাকা সব বানান অপরিবর্তিত)
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল পোস্টের দাবিটি অসত্য। আরবের দেশগুলো এমন কোনও পদক্ষেপ করেনি। ইতিপূর্বে সৌদি আরব এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তবে ২০২২ সালে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
যদি সত্যি আরবের দেশগুলোর পক্ষ থেকে সম্মিলিত এমন কোনও পদক্ষেপ করা হতো, তবে সেটা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার জন্য বিরাট বড় খবর হতো, এবং নানা সংবাদ মাধ্যমে সেই সংক্রান্ত খবরও পাওয়া যেত। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চের সাহায্যে এমন কোনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। যা থেকে অনুমান করা যায় যে দাবিটি ভিত্তিহীন।
তবে কিওয়ার্ড সার্চের সময় “আকাশ বন্ধ করল আরবরা ইসরাইলের বেহুঁশদশা! (ভিডিও)” শিরোনামে একটি খবর পাওয়া যায় www.amadershomoy.com (আর্কাইভ) নামের একটি ওয়েবসাইটে। গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এই খবরের শিরোনামে আকাশপথ বন্ধ করা হয়েছে হলেও প্রতিবেদনে ঠিক সেই কথা লেখা হয়নি। বরং সেখানে লেখা হয় যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হাতুর রিসার্চ সেন্টার দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে যে সকল আরবি দেশগুলি ইজরায়েলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করলে তার কী পরিণতি হতে পারে।
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ কর হলে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত মিডল ইস্ট আই-এর একটি খবর পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ পায় যে রিসার্চ সেন্টার নিজেদের একটি গবেষণাপত্রে পর্যালোচনা করেছে কীভাবে ইজরায়েল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি আরব এবং অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলো যদি নিজেদের আকাশসীমা ইজরায়েলের জন্য বন্ধ করে দেয়। তবে আরব এমন কোনও পদক্ষেপ করবে বা করতে চলেছে এমন তথ্যের কথা সেখানে উল্লেখ পায়নি। এই গবেষণাপত্রটি এখানে দেখা যাবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভাইরাল পোস্টটি নজর আসার পর আমরা ফ্লাইট রেডার ২৪-এ (এমন একটি অ্যাপ যেখানে বিশ্বের সকল যাত্রীবাহী প্লেন চলাচলের লাইভ আপডেট দেখা যায়) যখন আরবের আকাশসীমায় থাকা বিমানগুলিকে লক্ষ্য করি তখন সেখানে ইজরায়েলের রাজধানী তেল আবিব-গামী বিমানও দেখা যায়।
তবে নানা কিওয়ার্ড সার্চের সময় ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত একটি আল জাজিরার রিপোর্ট আমাদের নজরে আসে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, উক্ত সময়ে সৌদি আরব ঘোষণা করে যে তারা ইজারায়েলের সব ধরনের বিমানে যাতায়াতের জন্য তাদের আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দেবে। এই বড় ঘোষণার আগে ইজরায়েলের বিমান সৌদির আকাশসীমায় নিষিদ্ধ ছিল।
অর্থাৎ সবমিলিয়ে বলাই যায় যে আরবের দেশগুলোর পক্ষ থেকে ইজরায়েলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করার দাবিটি ভিত্তিহীন এবং এখনও এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
আরবের সকল দেশ ইজরায়েলের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমন কোনও সিদ্ধান্তের ঘোষণা কোনও দেশ করেনি। ২০২২ সালে বরং সৌদি আরব নিজেদের আকাশসীমা ইজরায়েলের জন্য খুলে দিয়েছে।