ফ্য়াক্ট চেক: "ভারতের সেভেন সিস্টারসের অস্তিত্ব থাকবে না!" ড. ইউনূসের বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার

একাধিক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, "বাংলাদেশের দিকে চোখ-রাঙালে ভারতের সেভেন সিস্টারের অস্তিত্ব থাকবেনা।" 

Advertisement
ফ্য়াক্ট চেক: "ভারতের সেভেন সিস্টারসের অস্তিত্ব থাকবে না!" ড. ইউনূসের বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার

বাংলাদেশের সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টার ভূমিকায় এসেছেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্য়ায় শপথগ্রহণ করেছে নতুন উপদেষ্টা মণ্ডলী। এই আবহে ড. ইউনূসের একটি তথাকথিত মন্তব্য। যেখানে ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তিনি নাকি ভারতের সেভেন সিস্টারসের অস্তিত্ব থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন। 

এমনই দাবিতে একাধিক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, "বাংলাদেশের দিকে চোখ-রাঙালে ভারতের সেভেন সিস্টারের অস্তিত্ব থাকবেনা।" 

উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যকে একত্রে সেভেন সিস্টারস বলা হয়। এই রাজ্যগুলি হলো- অসম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরাম। 

অনেকেই ফেসবুকে এই পোস্ট শেয়ার করে এমন কথাই লিখেছেন। থ্রেডসের মতো মাধ্যমেও ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে এই বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। 

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, এনডিটিভিতে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূসের করা একটি মন্তব্যকে বিকৃত এবং অতিরঞ্জিত করে বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

কীভাবে জানা গেল সত্যি

সবার প্রথম আমরা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করি ড. ইউনূস আসলে কী কথা বলেছিলেন। সার্চের মাধ্যমে আমরা কালবেলার একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই যা ৭ অগস্ট প্রকাশ পেয়েছিল। সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- "দেশ অস্থিতিশীল হলে তা মিয়ানমার ও ভারতের সেভেন সিস্টার্সেও ছড়াবে : ড. ইউনূস।" 

প্রতিবেদনের শিরোনামে করা ড ইউনূসের মন্তব্য খুবই স্বাভাবিক এবং তৎকালীন প্রস্তাবিত প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাঙ্খিত। এতে কোনও হুমকির সুরে বলা হয়নি যে সেভেন সিস্টারসের অস্তিত্ব থাকবে না। কালবেলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ড. ইউনূস এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন যে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা এবং যদি তা অর্জন করা না যায়, তাহলে ভারত-সহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়বে।

Advertisement

নিউজ ২৪ বিডি-র মতো ওয়েবসাইটেও স্পষ্টভাবে লেখা হয় যে ড. ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ যদি স্থিতিশীল না হয় তবে তার প্রভাব প্রতিবেশী এলাকাগুলিতে পড়বে। যার মধ্যে মিয়ানমার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বের সেভের সিস্টার রাজ্যগুলি রয়েছে। 

এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আমরা এনডিটিভিকে দেওয়া ড. ইউনূসের সেই সাক্ষাৎকারটি পুরো দেখি। এনডিটিভির ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া এই ভিডিওর ঠিক ৫ মিনিট নাগাদ সঞ্চালককে প্রশ্ন করতে শোনা যাবে যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়-  এই আন্দোলনকারীদের ঠিক কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন? এর নেপথ্যে কোনও সন্ত্রাসী সংগঠন বা অন্য কোনও গোষ্ঠী আপনার দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে? এবং সেই অনুযায়ী দিল্লি থেকে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান অনুযায়ী ভাবলে এর প্রভাব কি গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে পড়তে পারে না?"

এই প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, "অবশ্যই। সেটাই আমি প্রত্যেক সাক্ষাৎকারে বলছি। যদি আপনি (বা অন্য কেউ) বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন তবে এর প্রভাবে বাংলাদেশ-সহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে যার মধ্যে মিয়ানমার, সেভেন সিস্টারস এবং পশ্চিমবঙ্গও থাকবে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলেছিলেন তিনি দরজা খোলা রাখবেন তখন আমি খুশি হয়েছিলাম। কারণ মাসের পর মাস যদি এমন পরিস্থিতি চলতে থাকে তাহলে যারা বাংলাদেশ থেকে যাবেন তাদের গ্রহণ করতে হবে। এবং এই ধরনের পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর হবে না।"

অর্থাৎ মহম্মদ ইউনূসের পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য থেকে এ কথা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায় যে তাঁকে উদ্ধৃত করে ছড়ানো মন্তব্যটি বিভ্রান্তিকর এবং বিকৃত। 

 

ফ্যাক্ট চেক

Facebook users

দাবি

ড. মহম্মদ ইউনূস বলেছেন যে ভারত বাংলাদেশের দিকে চোখ-রাঙালে ভারতের সেভেন সিস্টারের অস্তিত্ব থাকবে না

ফলাফল

মহম্মদ ইউনূসের এই মন্তব্যটি বিকৃত করা হয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে যদি বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা না ফিরে আসে তবে তার প্রভাব মিয়ানমার, সেভেন সিস্টারস এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো জায়গাগুলিতে পড়বে। 

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement