
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে যেখানে এক প্রবীণ ব্যক্তিকে গলায় জুতোর মালা পরে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে এই ঘটনাটি বাংলাদেশের এবং এই ব্যক্তি একজন হিন্দু শিক্ষক।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ইনি বাংলাদেশের উচ্চ বিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষক ! ৪০ বছর ধরে শিক্ষা দান করার পর..... বাংলাদেশের কট্টর উগ্র মুসলমানরা জুতোর মালা দিয়ে এইভাবে সম্মান জানিয়েছে ||"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল পোস্টের দাবি মিথ্যে। এই ব্যক্তি হিন্দু নয় বরং মুসলিম। সেই সঙ্গে শিক্ষকতাও তাঁর পেশা নয়।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পেজেও পাওয়া যায়। তিনি ভিডিওটি পোস্ট করে লেখেন যে ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজবাড়ি জেলার বলিয়াকান্দি উপজেলায় ঘটেছে। এবং এই ব্যক্তির নাম ডাঃ আহমদ আলী। যা থেকে অনুমান করা যায় তিনি মুসলিম।
এই তথ্যকে সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম কালের কণ্ঠ এবং ঢাকা টাইমস্ ২৪-এর একাধিক রিপোর্ট পাওয়া যায়। গত ১৫ প্রকাশিত এই রিপোর্টগুলিতে বলা হয়, আহম্মদ আলী নামের পেশায় চিকিৎসক এই ব্যক্তি পয়গম্বর হজরত মহম্মদ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার কারণে প্রথমে তাঁকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এরপর জুতোর মালা পরানো হয়। এর থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আহম্মদ আলী একজন মুসলিম ব্যক্তি।
খবরগুলি থেকে আরও জানা যায়, রবিবার, ১৫ জুন এই ঘটনাটি ঘটেছিল। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে তিনি নবাবপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বালিয়াকান্দি থানার ওসি জামাল উদ্দিনকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টগুলিতে লেখা হয়, "আহম্মদ আলী সকালে বেরুলী বাজারে চায়ের দোকানে মহানবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা দুপুরে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়।"
তিনি আরও জানান যে এই খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উভয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছয় এবং ক্ষিপ্ত জনতাকে শান্ত করে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। আহম্মদ আলীকে উদ্ধার করতে গিয়ে ওসি নিজেও জনতার আক্রোশে আক্রান্ত হন। এই ঘটনার পর আহম্মদ আলীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই বিষয়গুলি থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে মহানবী হজরত মহম্মদকে কটূক্তি করার অভিযোগে এক মুসলিম ব্যক্তি মারধর করে জুতোর মালা পরানোর ঘটনাকে ভুয়ো এবং সাম্প্রদায়িক দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে এক হিন্দু শিক্ষককে কীভাবে জুতোর মালা পরানো হয়েছে।
ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির নাম আহম্মেদ আলী যিনি মুসলিম। মহানবীর উদ্দেশ্যে কটূক্তি করার অভিযোগে তাঁর গলায় জুতোর মালা পরানো হয়েছিল।