

পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'অপারেশন সিঁদুর'-এর দৌলতে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। অন্যদিকে, এই হামলার পাল্টা জবাবে ভারতীয় বায়ুসেনার কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে সরকারিভাবে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এই আবহে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে নানা ধরনের ছবি শেয়ার করা হয়েছে। ছবি ও ভিডিওগুলি মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে পাকিস্তানে হামলা করে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ভারত।
উদাহরণস্বরূপ, একটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার ভিড়ের ছবি পোস্ট করা হয়েছে ফেস দ্য পিপল (আর্কাইভ) নামের একটি পেজ থেকে। পোস্ট করে লেখা হয়েছে, "এক রাতের যুদ্ধেই ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ভারত।"

আবার চিন সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি চায়না ডেইলির (আর্কাইভ) একটি ফেসবুক পোস্টেও এই ছবি ছড়িয়ে একই দাবি করা হয়েছে।

যমুনা টিভির (আর্কাইভ) একটি ফেসবুক পোস্টে আবার তিনটি ছবির একটি কোলাজ শেয়ার করা হয়েছে। বাকি দুটি ছবি স্পষ্ট না হলেও দ্বিতীয় ছবিতে একটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে। একই কোলাজ শেয়ার ব্যবহার করেছে যুগান্তরও। উভয়েই পাকিস্তানের দাবি উদ্ধৃত করে লিখেছে যে ভারতীয় সেনার ৫ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে ব্রিগেড সদর দফতরে হামলা করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানে আগুন লেগে গিয়েছে, এমন দৃশ্য ধারণ হওয়া একটি ছবিও একই দাবিতে পোস্ট করেছে একাধিক বাংলাদেশী গণমাধ্যম। যেমন সময় টিভি (আর্কাইভ), কালবেলা, ঢাকা টুডে, একুশে টিভি, দৈনিক ইত্তেফাক, ডেইলি ইনকিলাবের মতো সংবাদ মাধ্যম। এখানে কিছু সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম করা হয়েছে, "পাকিস্তানে হামলা চালাতে গিয়ে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ভারত।"

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেকের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করে দেখা হয়েছে যে এই সকল পোস্টের ছবিগুলি পুরনো এবং বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে অসম্পর্কিত। পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমে ভুয়ো ছবি প্রচার হওয়ার পর সেই ফাঁদে পড়ে একই ছবি প্রচার করেছে বাংলাদেশী মিডিয়া।
অনুসন্ধান
প্রথম ছবিটির উৎস সন্ধান করা হলে তা ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হাফপোস্টের একটি খবরে। সেখানে লেখা হয়, জম্মু কাশ্মীরের শ্রীনগরের অদূরেই বদগামে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি হেলিকপ্টার ভেঙে পড়েছিল। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালেই এই ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনায় ৬ বায়ুসেনা সদস্যের মৃত্যু হয়।

আসল ছবিটি স্টক ফটোর ওয়েবসাইট অ্যালামিতে পাওয়া যাবে। বদগামের গারেন্দ কালান গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে বলে এখানে জানানো হয়।
দ্বিতীয় ছবিতে যেখানে অন্ধকারের মধ্যে একটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ কোনও গর্তের মতো এলাকায় দেখা যাচ্ছে, এই ছবিটি প্রথমে পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম আরি নিউজে সম্প্রচার করা হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশী সংবাদ মাধ্যমেও তা ছড়িয়ে পড়ে। তবে ছবিটির উৎস খুঁজে দেখা যায়, এটি ২০২১ সালের মে মাসের।

ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ ২১ যুদ্ধবিমান পঞ্জাবের মোগা এলাকায় ভেঙে পড়ে। এই বিমানে স্কোয়াড্রন লিডার অভিনব চৌধুরী ছিলেন যাঁর এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়।
এরপর তৃতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে একটি বিধ্বস্ত বিমানে আগুন লেগে রয়েছে। বহুল প্রচারিত এই ছবিটিও পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম আরি নিউজে সম্প্রচার করা হয়েছিল। তবে এই ছবিটি আসলে ছিল ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্থানে ঘটা একটি দুর্ঘটনার।

২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের বারমের সেক্টরে নিয়মিত প্রশিক্ষণ মিশন চলাকালীন সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে। যদিও এই ঘটনায় পাইলটের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেখানে বিমান বাহিনীর তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, “বারমের সেক্টরে একটি নিয়মিত রাতের প্রশিক্ষণ মিশনের সময়, ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি মিগ-২৯ বিমানে গুরুতর কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। যার ফলে পাইলটকে বেরিয়ে আসতে হয়। পাইলট নিরাপদে আছেন এবং কোনও প্রাণহানি বা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে পুরো ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ফলে এর থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় কীভাবে পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি পুরনো এবং অসম্পর্কিত ছবি ব্যবহার করে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে ভারতের এক রাতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।

ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর পাল্টা জবাবে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার একাধিক বিমান।
ভাইরাল ছবিগুলি পুরনো এবং অন্যান্য ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত।