
সম্প্রতি একাধিক রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক হেনস্তার একাধিক খবর উঠে এসেছে নানা সংবাদ মাধ্যমে। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে যেখানে রাতের অন্ধকারে পুলিশের উর্দিতে থাকা জনাকয়েক ব্যক্তিকে অন্যান্য কয়েকজন মারধর করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে এখানে হরিয়ানার গুরুগ্রামের ঘটনা যেখানে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ঠিক এভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানায় গুরুগ্রামে থেকে কোচবিহারের একজন পরিযায়ী শ্রমিক এই ভিডিওটি পাঠিয়েছে । সেখানে বাংলাভাষী কিছু মানুষকে বাংলাদেশী সন্দেহে অমানবিকভাবে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে হরিয়ানা পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ধিক্কার জানাই।।"
এবিপি আনন্দের একটি প্রতিবেদনেও ভিডিওটি ব্যবহার করা হয়। ভিডিওটি ব্যবহার করে বলা হয় যে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় এই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে হরিয়ানায় বাঙালি অত্যাচারের দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেছেন এক পরিযায়ী শ্রমিক তাঁকে এই ভিডিও পাঠিয়েছে। এবিপি-র এই ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, "Bengali Harassment: 'বাঙালিদের অমানবিকভাবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে হরিয়ানা পুলিশ'! গুরুগ্রামে ভয়ঙ্কর ছবি।" এই ভিডিও-র আর্কাইভ সংস্করণ এখানে দেখা যাবে।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ অন্য ঘটনার। এর সঙ্গে বাঙালিদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের কোনও সম্পর্ক নেই।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
যেহেতু পার্থপ্রতিম ঘোষই এই ভিডিওটি সবার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন, তাই সবার প্রথম তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে আমরা সেই পোস্ট খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। তখন দেখা যায়, পার্থপ্রতিম গত ২৩ জুলাই ওই একই ভিডিও পোস্ট করে দুপুর নাগাদ ক্যাপশনে লিখেছিলেন, "বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানায় গুরুগ্রামে থেকে কোচবিহারের একজন পরিযায়ী শ্রমিক এই ভিডিওটি পাঠালেন। সেখানে বাংলাভাষী কিছু মানুষকে বাংলাদেশী সন্দেহে অমানবিকভাবে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে হরিয়ানা পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ধিক্কার জানাই।।"
যদিও এরপর পার্থপ্রতিম মোট ছয়বার ওই পোস্টটি এডিট করেন। এবং ২৩ জুলাই রাত ১০ নাগাদ সর্বশেষ এডিট করে লেখেন যে, "আমি কিছুক্ষণ আগে জানতে পারি এই ভিডিওটি হরিয়ানার অন্য একটি ঘটনার। তাই ভিডিওটি তুলে নিলাম।" অর্থাৎ, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম নিজেই স্বীকার করে নেন যে ভিডিওটি অন্য ঘটনার এবং সেই অনুযায়ী ভিডিওটি মুছে পোস্টটি এডিট করে দেন।
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে এরপর গুগল লেন্সের মাধ্যমে স্ক্রিনশটটি খোঁজা হলে হলে ওই ভিডিও The Sentinel নামের একটি এক্স হ্যান্ডেলে পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ১১ জুলাই পোস্ট করে লেখা হয়েছিল, হরিয়ানার হিসারে পুলিশের বিরুদ্ধ গণেশ বাল্মিকী নামের এক দলিত যুবককে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
এই বিষয়ে হিন্দিতে কিছু কিওয়ার্ডের মাধ্যমে সার্চ করা হলে দেখা যায়, এই ভিডিওটি ব্যবহার করে দৈনিক ভাস্কর দিন ১৫ আগে একটি খবর প্রকাশ করেছে। সেই খবরে লেখা হয়, হরিয়ানার হিসারে ৭ জুলাই রাতে একটি জন্মদিনের পার্টিতে ডিজে বন্ধ করার ঘটনায় নতুন ভিডিও সামনে এসেছে। এই ঘটনায় গণেশ বাল্মিকী নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছিল। সঙ্গে আকাশ নামে আরেক যুবক আহত হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে ডিজে বন্ধ করতে যাওয়া হলে তাদের উপর পাথর ছোড়া হয়েছিল। তবে আক্রান্ত দলিত পরিবারের পাল্টা অভিযোগ, গণেশকে পুলিশই ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছে।
ঘটনাটি সম্পর্কে আরও কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে এবিপি গঙ্গা-র ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ জুলাই এই একই ভিডিওটি আপলোড হয়েছে দেখা যায়।
এই একই ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ লেখেন যে এটা কোনও দুর্ঘটনা নয় বরং পুলিশ দ্বারা হত্যা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাল্মিকী সমাজের যুবদকের কি আনন্দ করার অধিকার নেই?
हरियाणा के हिसार ज़िले के भारत नगर में 16 वर्षीय गणेश वाल्मीकि के जन्मदिन की खुशी मातम में बदल गई। परिवार म्यूज़िक बजाकर जन्मदिन मना रहा था — यह किसी भी इंसान का मौलिक अधिकार है।
— Chandra Shekhar Aazad (@BhimArmyChief) July 10, 2025
लेकिन शराब के नशे में धुत पुलिसकर्मी जबरन म्यूज़िक बंद करवाने आए, जातिसूचक गालियाँ दीं, कुछ और पुलिस… pic.twitter.com/VOEqqN6Dy2
উক্ত ভিডিওটির বিষয়ে ২৩ জুলাই এপিবি আনন্দের অনুষ্ঠান 'ঘণ্টাখানেক'-এও আলোচনা হয় এবং সঞ্চালক সুমন দে বলেন যে তাঁরা শুধুমাত্র পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেননি। বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তেওয়ারি নিজের ফেসবুকে ওই অংশটি পোস্ট করেন।
এ ছাড়াও কংগ্রেস সাংসদ এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এই ঘটনা সম্পর্কে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে বিজেপি আরএসএস-র সমালোচনা করেন এবং এই দলিত পরিবারকে ন্যায় দেওয়ার দাবি জানান।
जब सत्ता मनुवादी सोच की गोद में बैठती है, तो दलितों की जान की कोई कीमत नहीं बचती!
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) July 17, 2025
हरियाणा के हिसार में दलित युवक गणेश वाल्मीकि की हत्या और उसके परिवार के साथ हुई बर्बरता सिर्फ एक अपराध नहीं है - यह BJP-RSS की मनुवादी सिस्टम का वो घिनौना चेहरा है जो आज भारत में बहुजनों के जीवन को… pic.twitter.com/BI4hhxsMjT
হরিয়ানা তকের ইউটিউব চ্যানেলেও এই ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন নীচে দেখা যাবে।
এই বিষয়ে সবিস্তারে জানতে আমরা আজতকের হিসার জেলার প্রতিনিধি প্রবীণ কুমারের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনিও আমাদের নিশ্চিত করেন যে ঘটনাটির সঙ্গে বাঙালিদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের কোনও সম্পর্ক নেই।
সবমিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে হরিয়ানার হিসার জেলায় ঘটনা গত ৭ জুলাইয়ের একটি ভিডিও ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন দাবিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হরিয়ানায় গুরুগ্রামে কীভাবে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপরে অত্যাচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি গত ৭ জুলাইয়ের হরিয়ানার হিসার জেলার। এক দলিত পরিবারে জন্মদিন উদযাপনের সময় পুলিশ ডিজে বন্ধ করতে গেলে এই সংঘর্ষ হয়। এর সঙ্গে বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের কোনও সম্পর্ক নেই।