
বিক্ষোভে শামিল মানুষের ভিড়ে পুলিশের লাঠিচার্জ করার একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ জাতীয় পতাকা হাতে থাকা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আঘাতের জেরে মাটিতে বসে পড়তেও দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে, এই ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের। যেখানে চাকরির পরীক্ষার্থী তথা ছাত্র-ছাত্রদের উপর এভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “এটা যদি বাংলায় হত তাহলে কি হতো? উত্তর প্রদেশে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ! এর পরেও কেউ ডাবল ইঞ্জিন সরকার চাইবেন?”
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি উত্তর প্রদেশের নয় এবং এর সঙ্গে নিয়োগপ্রার্থী ছাত্রছাত্রীদের কোনও সম্পর্ক নেই।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওতে ‘tA-The Activist’ নামের কোনও চ্যানেলের একটি লোগো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সার্চ করা হলে ইউটিউবে আমরা এই চ্যানেলটি খুঁজে পাই। চ্যানেলের বিবরণ অনুযায়ী, এটি বিহারের একটি ডিজিটাল সংবাদ চ্যানেল।
এই চ্যানেলে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায় যা গত ১০ সেপ্টেম্বর আপলোড করা হয়েছিল। এই ভিডিও-র শিরোনামে যা লেখা হয় তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা বিজেপি অফিস ঘেরাও করতে গেছিলেন, পুলিশ তাদের তাড়া করে মারধর করে।”
ভিডিও-র বিবরণে নীতিশ কুমার এবং বিহার নিউজের মতো হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করা হয়। যা থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে ভিডিওটি খুব সম্ভবত বিহারের। এর পাশাপাশি যে সাংবাদিক ক্রমাগত ঘটনার ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন তিনিও বিক্ষোভকারীদের হিন্দিতে ক্রমাগত ‘সংবিদা কর্মী’ বলে উল্লেখ করছিলেন। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ঠিকা কর্মী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী। ১ মিনিট ৪০ সেকন্ডের মাথায় সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়, “সুশাসনবাবুর শাসনকালে এমন পরিস্থিতি।” যা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় ভিডিওটি বিহারের। কারণ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকেই সুশাসনবাবু বলে ডাকা হয়।
এরপর আমরা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করি ১০ সেপ্টেম্বর বিহারের রাজধানীতে বিজেপির সদর দফতরের সামনে কোনও বিক্ষোভ প্রদর্শনে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছিল কিনা। কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হিন্দুস্তান, এবং নবভারত টাইমসে প্রকাশিত একাধিক খবর দেখতে পাই।
এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি বিহার সরকার ১৬ জন চুক্তিভিত্তিক জমি পরিমাপ করার কর্মীকে সাসপেন্ড করে। ওই ১৬ কর্মী বেতনে সংক্রান্ত কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছিলেন। আন্দোলনের জেরে তাদের সাসপেন্ড করা হলে বাকি ঠিকা কর্মীরাও পথে নেমে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ঠিকা কর্মী প্রতিবাদ জানান।
ঠিকা কর্মীদের উপর এই লাঠিচার্জের ভিডিও লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীও নিজের এক্স হ্যান্ডেলে গত ১০ সেপ্টেম্বর শেয়ার করেছিলেন। ভিডিওটি পোস্ট করে তিনি লেখেন যে বিহারের যুবসমাজ এ বার এনডিএ সরকারকে তাদের আসল জায়গা দেখিয়ে দেবে।
रोज़गार मांगने पर मिलती है लाठी,
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) September 10, 2025
अधिकार की जगह मिलता है अत्याचार।
बिहार के युवा अबकी बार इस गुNDA सरकार को उसकी असली जगह दिखाएंगे - उल्टी गिनती चालू हो गई है।pic.twitter.com/6o6DXqAqWu
সুতরাং, বুঝতে বাকি থাকছে না যে ভিডিওটি উত্তর প্রদেশের নয় বরং বিহারের, এবং এখানে চাকরিপ্রার্থী ছাত্রছাত্রীদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়নি।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে উত্তর প্রদেশে পুলিশ কীভাবে চাকরিপ্রার্থী ছাত্রছাত্রীদের লাঠিপেটা করছে।
ঘটনাটি উত্তর প্রদেশ নয় বরং বিহারের। ১০ সেপ্টেম্বর পাটনায় বিক্ষোভরত চুক্তিভিত্তিক ঠিকা কর্মীদের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ করা হয়েছিল।