
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন মহিলার একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে, নদিয়া জেলার এক বিজেপি মহিলা মোর্চা নেত্রী নাকি সম্প্রতি পরকীয়া করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন।
এহেন দাবির সপক্ষে যে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে সেখানে এক মহিলাকে ভীত অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে, এবং বেশ কয়েকজন পুরুষ তাঁকে ঘিরে রয়েছেন। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "বিজেপি নেত্রীর পরকীয়া। নদিয়ার হরিদাস পুরের ৩ নং ওয়ার্ড এর বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী , মন কি বাদ শুনাতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। বিজেপির চরিত্র হলো এইটা।”
ভিডিওতে থাকা ওই মহিলার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মুখ আবছা রাখা হলো।
আজ তক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নদিয়া বা পশ্চিমবঙ্গের নয়, ভারতেরও নয়। এটি বাংলাদেশের যশোর জেলার একটি ঘটনা, যা ভিত্তিহীন ও মিথ্যে দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তার রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে, ওই একই ভিডিও breakingJessore নামক ইউটিউব চ্যানেল এবং কাজল চন্দ্র নামে এক বাংলাদেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে পাওয়া যায়।
উভয় পোস্টের ক্যাপশনেই লেখা হয় যে, এই ঘটনাটি বাংলাদেশের যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি গ্রামে ঘটেছে। যেখানে বিবাহ বহির্ভূত পরকীয়া চালানোকালীন স্থানীয়দের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন ওই মহিলা ও তার কথিত প্রেমিক।
এই বিষয়ে বিশদে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে বাংলাদেশের একাধিক ডিজিটাল সংবাদ মাধ্য়মে এই সম্পর্কে রিপোর্ট পাওয়া যায়। গত ৬, ৭ ও ৯ অক্টোবর এই রিপোর্টগুলো প্রকাশ পায় লোকসমাজ, রাজশাহীর সময় এবং অগ্রযাত্রা প্রতিদিন নামক ওয়েবসাইটে। এখানে মূল ছবিতে ওই মহিলাকে একই পোশাকে দেখা যায় যাকে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তার কথিত প্রেমিককেও দেখা যায়।
রিপোর্টগুলোয় লেখা হয়, বিবাহিত ওই মহিলার সঙ্গে যে যুবক ধরা পড়েছে তার নাম রাকেশ হৃদয়। ফেসবুকে পরিচয় থেকে তাদের প্রেম শুরু হয়। গত শনিবার দুর্গাপুজো পরবর্তী অনুষ্ঠানে যখন ওই মহিলার স্বামী ব্যস্ত ছিলেন, তখন রাকেশ এসে ঘরে ঢোকে। কিন্তু এই সময় নিজের স্ত্রীকে পরপুরুষের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন স্বর্ণব্যবসায়ী স্বামী। এরপর ওই দু'জনকে আটক করে স্থানীয়রা, মারধরও করা হয়। পরকীয়ায় লিপ্ত ওই মহিলার ১২ বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে বলে একাধিক রিপোর্টে লেখা হয়েছে।
এই ঘটনার পর গ্রামে সালিশি সভা বসানো হয়। সেখানে ওই গৃহবধু জানান তিনি স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চান না, বরং রাকেশকে বিয়ে করতে চান। এরপর ওই মহিলার পরিবারকে খবর দেওয়া হয় এবং একটি সম্মতিপত্রে সই নিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে তুলে দেওয়া হয়।
সব মিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে বাংলাদেশের যশোর জেলার একটি ঘটনাকে কীভাবে নদিয়া জেলায় বিজেপি মহিলা মোর্চা নেত্রীর সঙ্গে জুড়ে দিয়ে ভুয়ো প্রচার করা হচ্ছে।
এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে নদিয়ায় বিজেপির এক মহিলা মোর্চা নেত্রী পরকীয়া করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন।
ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের যশোর জেলার। অক্টোবর মাসে এই মহিলা পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে স্বামী ও গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়েন।